রাজস্থলীতে  চলছে কাঠ পাচার

0

হারাধন কর্মকার, রাজস্থলী।
রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় বিভিন্ন সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অবাধে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারী কাঠ। স্থানীয় বন বিটের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রতি রাতেই পাচার হয় এসব কাঠ। কাঠ পাচারে প্রতিরাতে অবৈধ লেনদেন হয় হাজার হাজার টাকা। অভিযোগ উঠেছে মাসোহারা পেয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে রাজস্থলীর অধীকাংশ বন বিভাগ । সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বন বিভাগের কর্মচারী এবং স্থানীয় কাঠ চোর সিন্ডিকেট দ্বিপক্ষীয় যোগসাজশে ব্যাপক কাঠ পাচার হয় উল্লেখিত সড়ক দিয়ে। পাচারের জন্য অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নিয়েও দেখা দিয়েছে শংকা। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, রাজস্থলী রেঞ্জ গুলোর বিট এলাকা হতে বন চেকপোস্টে বিটের বন প্রহরীদের দায়িত্বকালে ট্রাক, চাঁদের গাড়ী ভর্তি করে ব্যাপক কাঠ পাচার হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্য জানতে চাইলে তারা বিট অফিসারদের নিয়ন্ত্রনে সমস্ত কাঠ পাচার হয় বলে জানান। অন্যদিকে কাঠ পাচারে লিপ্ত সেন্ডিকেটের সদস্যদের নিকট জানতে চাইলে তারা কোন ধরণের তথ্য দিতে রাজি হন নি। বর্তমানে প্রায় রাতেই তারা মিনি ট্রাক ও চাঁদের গাড়ী যোগে গামারী, গর্জন গাছসহ আরো নানা প্রজাতির বনাঞ্চলের কাঠ নিয়মিত পাচার হচ্ছে। জানা যায়, বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এফজিদের সবাইকে ম্যানেজ করে এ কাঠ পাচার ব্যবসা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাঠ পাচার রোধ করার জন্য পাল্পউড বাগান বিভাগের অধীনস্থ রয়েছে রাজভিলা রেঞ্জ, বাঙ্গালহালিয়া বিট কাম ষ্টেশন, সদর রেঞ্জ, ধনুছড়ি রেঞ্জ, আরাছড়ি রেঞ্জ, নোয়াপতং রেঞ্জ। অফিস গুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতদঞ্চলের বনজ সম্পদ উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, রেঞ্জ ও বন বিটের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এতদঞ্চলের বনজ সম্পদ উন্নয়নের পরিবর্তে নিধনযজ্ঞ, সম্প্রসারণের পরিবর্তে সংকোচন এবং সংরক্ষণের পরিবর্তে নিধন মহোৎসবে নেমে পড়েছে। পাশাপাশি চেক স্টেশনগুলো পাহারাদারির পরিবর্তে কাঠ পাচারের মহোৎসবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে রাজস্থলীতে বিশাল বনভূমি দিন দিন বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, বন বিটগুলোর আওতাধীন এলাকায় সরকারী অর্থে ও প্রাকৃতিক ভাবে সৃজনকৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে পাচারকারীরা দিনে ও রাতে সেগুন, চাপালিশ, গামারী, কড়ই, গর্জন, আকাশমনি, জামগাছসহ নানা প্রজাতির ছোট-বড় গাছ কেটে সরকারী বাগান সংলগ্ন নিরাপদ জায়গায় স্তুপ করে রাখে। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব কাঠ গাড়ীভর্তি করে বিভিন্ন সড়ক দিয়ে রাতভর পাচার করে রাঙ্গুনিয়া হয়ে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন ইটভাটা এবং ‘স’ মিলে। বর্তমানে বন বিট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রক্ষকের পরিবর্তে ভক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে। শুধু এতেই শেষ নয়, বনবিভাগের কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি কোনভাবেই খবর পেয়ে বিশেষ অভিযানে নামে তখন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাছ পাচারকারীদের কাছে সে খবর দ্রুত পৌঁছে দেয়। এতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অভিযান নিষ্ফল হয়। বিশেষ করে রাত ১০টা পেরুলই শুরু হয় পাচার মিশন। এর পর পথে পথে চলে চাঁদাবাজি। চাঁদা আদায়ে এলাকা ভিত্তিক নিয়োজিত রয়েছে আদায়কারী সিন্ডিকেট। রাজস্থলী সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ কাইয়ুম নিয়াজীর নিকট জানতে চাইলে তিনি কাঠ পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। তবে তিনি যোগদানের পর থেকে এই পর্যন্ত কাঠ কর্তন ও পাচারের বিষয়ে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। কিন্ত সেনাবাহিনী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ টাকার মুল্যবান কাঠ আটক করে রেঞ্জ গুলোতে জমা দিয়েছেন।

Share.

Leave A Reply