যুবলীগে এলিটের পদ বাতিল চান মিরসরাই আ’লীগ : দলকে একটি পরিবারে সীমাবদ্ধতা রাখতে এ অপপ্রচার : এলিট

0

 আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের সদস্যপদ বাতিলের দাবি করেছে তার নিজ উপজেলা মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ। এনিয়ে ফেসবুকসহ সমালোচনার জবাবে এলিট গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত গণমানুষের একটি দলকে যদি একটি পরিবার ও গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় তাহলে তো সেটা দলের জন্য কখনো মঙ্গল বয়ে আনবে না।’

রোববার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগের মিরসরাই উপজেলা  সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবাদলিপি মিরসরাই প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দকে হস্তান্তর করা হয়। এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- দলটির উপজেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ দিদার ও দফতর সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হোসেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে  বলা হয়, গত ৭ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্য তালিকায় নিয়াজ মোর্শেদ এলিট নামের এক ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যা দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দৃষ্টিগোচর হয়। যার ফলে মিরসরাই আওয়ামী রাজনীতিতে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় রাজনীতিতে এক ধরণের বিশৃঙ্খলাও দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বিএনপি অধ্যুষিত পরিবারের সন্তান। তার বাবা বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট। এছাড়া যুবলীগের সদস্য পদে পদায়ন হওয়া এলিট কোন কালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কিংবা কৃষক লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তারা সহসা আওয়ামী যুবলীগের সদস্যপদ থেকে এলিটের নাম প্রত্যাহারের দাবিও জানান।
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বড়তাকিয়া মোটরস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। জুনিয়র চেম্বার, খুলশী ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট চট্টগ্রামের অন্যতম আলোচিত মুখ। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত। চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক এই ব্যবসায়ী নাছিরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও আলোচিত। ২০১৮ সালের মার্চে এলিট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটিতে সদস্য পদ পান। তখন চট্টগ্রামে দলের অভ্যন্তরে নানামুখী আলোচনা তৈরি হয়।
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মসজিদিয়া গ্রামের বাসিন্দা শিল্পপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফের সন্তান এলিট। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত মনিরুল ইসলাম ইউসুফ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে দলটির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সেসময় ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তায় সন্তান এলিট তার বাবাকে ভোট না দেওয়ার জন্য মীরসরাইবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। সন্তান হয়েও বাবার বিরুদ্ধে এই ভূমিকা নিয়ে প্রশংসাও পেয়েছিলেন তিনি। মীরসরাই উপজেলায় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নিয়াজ মোরশেদ এলিট একাদশ সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

গণমাধ্যমে এলিটের প্রেস বিজ্ঞপ্তি :

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নব নিযুক্ত সিসি মেম্বার ও তরুণ ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেছেন, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীকে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষ ও পরিবার ছাড়া অন্যরা ভালোবাসতে পারবেনা তা কিন্তু নয়। এখন আমার রাজনৈতিক কমিটমেন্টের কারণে আমার অবস্থান শক্ত হলে কারো ভীত নড়বড়ে হয়ে গেছে ভাবে সেটা তাদের বিষয়। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে উনার একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেছি, সামনেও করে যাব। রাজনীতি করে আমি এক টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছি তা কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা। আমি দেশের সব নিয়ম কানুন মেনে ব্যবসা করি। রাজনীতি করি বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীকে ভালোবাসি আর দেশের মানুষের পাশে থাকার ক্ষুদ্র চেষ্টা থেকেই। এখানে চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই। আল্লাহ কাউকে সম্মান দিলে সেখানে হিংসুক লোকজন কি তা কেড়ে নিতে পারে? আমিতো আমার রাজনীতি করছি। কারো বাড়া ভাতে ছাই দিচ্ছিনা। তাহলে কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের কেন এতো মাথা ব্যথা? মিরসরাই আমার জন্মস্থান সেটা তো অপরাধ হতে পারেনা!

সোমবার (১৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এলিটের কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য পদ বাতিলের চেয়ে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবৃতি ও ফেসবুকে সমালোচনার জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

নিয়াজ মোর্শেদ এলিট আরো বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে আমি পারিবারিক ব্যবসা থেকে বের হয়েছি। আমার বাবা অন্য রাজনীতি করে বলে তার সাথেও আমার সম্পর্কও ছিন্ন করতে হয়েছে। আমার নিজস্ব একটা পরিচয় আছে। দলের জন্য কাজ করছি। ক্রীড়াসহ নানা সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত দীর্ঘদিন ধরে। এরপরও কেন আমার বাবার কথা বলে আমাকে টেনে নামানোর চিন্তা? এসব গতবার আন্তর্জাতিক উপ কমিটির সদস্য পদ পাওয়ার সময়ও করা হয়েছিল। নেতৃবৃন্দ সব অবগত আছেন। আমি হলফ করে বলছি, আমি কোনও দিন আওয়ামী লীগের বাইরে যদি অন্য কোনও দল করেছি একদিনের জন্যও সেটা কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে যু্বলীগের পদ থেকে পদত্যাগ করব। আমার বিরুদ্ধে যেসব অপ্রচার করা হচ্ছে ভিত্তিহীন মনগড়া ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত।

তরুণ এ রাজনীতিবিদ বলেন, পদ পদবী প্রত্যেক কর্মীর জন্য অলঙ্কার স্বীকৃতি। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও যুবলীগ সভাপতি পরশ ভাই আমাকে তাদের সাথে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন তাই কৃতজ্ঞ। কিন্তু পদে না রাখলেও আমি কাজ করতাম না তা নয়। সুতরাং একটা সদস্য পদ নিয়ে কারো এতো বিচলিত হবার কিছু নেই। আমার পিতা অন্য দল করে সেটা নিয়ে আমাকে বির্তকিত করার অপ্রচেষ্টা হচ্ছে। উনিও তো আওয়ামী লীগই করতেন। উনি কেন দল ত্যাগ করলেন, সেটারও কারণ বের করা দরকার। কেন তিনি আওয়ামী লীগে থাকতে পারেননি। এ রকম আওয়ামী লীগের মত গণমানুষের একটি দলকে যদি একটি পরিবার ও গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় তাহলে তো সেটা দলের জন্য কখনো মঙ্গল বয়ে আনবে না।’

এলিট বলেন, রাজনীতিতে নানা মত থাকবে, তবে আর্দশের ঠিকানা একটাই, একজনই। আমাদের আর্দশিক নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আদর্শ বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় যে কোনও নাগরিকই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে পারে। আমিও স্কুল জীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি করার পর গতবার আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার কাজের মূল্যায়ন করে যুবলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। আমিও তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করব।

তরুণ এ নেতা রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি চট্টগ্রাম খুলশী ক্লাব লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সভাপতি, জুনিয়র চেম্বার চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশান চট্টগ্রামের চিফ কো-অর্ডিনেটর, ব্রাদার্স ইউনিয়ন (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) ক্রিকেট কমিটির সভাপতি, একুশে মেলা পরিষদের মহাসচিব, কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের প্রধান উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের সদস্য ও শাহীন গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের আজীবন সদস্য। সাম্প্রতিক সময়ে মানুষকে লাল ভালোবাসা প্রদানের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। তৈরি করেছেন ‌‘নিয়াজ মোর্শেদ এলিট ব্লাড ডোনার্স ক্লাব’। স্বেচ্ছাসেবীমূলক এ সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে রক্তদান করা হয়।

Share.

Leave A Reply