গাছ লাগানো সদকায়ে জারিয়া

0

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী :

মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার সব উপাদানই আসে উদ্ভিদ থেকে। আমিষের উপকরণ পশুপাখিও উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। নবীজি (সা.) বৃক্ষরাজি খুবই ভালোবাসতেন। মহানবী (সা.) নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন এবং গাছ লাগানোর জন্য অন্যদের উৎসাহিত করেছেন। রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরাও গাছ লাগাতেন। বর্তমান পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে তথা মানবসভ্যতার সুরক্ষার জন্য মহানবী (সা.)–এর মহান সুন্নাত বৃক্ষরোপণ অতীব প্রয়োজন।

বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্বারোপ করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকাস্বরূপ গণ্য হবে।’ (বুখারি: ২৩২০, মুসলিম: ১৫৬৩)।

অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বৃক্ষরোপণ করে তা ফলবান হওয়া পর্যন্ত তার পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যদি নষ্টও হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে সদকার নেকি দেবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১৬৭০২)। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিদান দেবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৫৬৭)।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।’ (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ: ৪৭৯; মুসনাদে আহমাদ: ৩/ ১৮৩)। আরও ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামত এসে গেছে, এমন অবস্থায় তোমাদের কারও হাতে যদি ছোট একটি খেজুরের চারা থাকে, তাহলে সে যেন চারাটি রোপণ করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১২৯০২ ও ১২৯৮১; আদাবুল মুফরাদ: ৪৭৯; মুসনাদে বাজজার: ৭৪০৮)।

বৃক্ষরোপণ, পরিচর্যাকরণ ও সংরক্ষণ সবারই দায়িত্ব। বৃক্ষ সংরক্ষণের নির্দেশ ও নিধনে হুঁশিয়ারি দিয়ে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ: ৫২৪১, বায়হাকী: ৬/১৪০।

গাছ লাগানো সদকায়ে জারিয়া। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম গাছ লাগায় অথবা কোনো ফসল বোনে আর মানুষ ও পশুপাখি তা থেকে খায়, এটা রোপণকারীর জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।’ (বুখারি: ২৩২০)। যত দিন পর্যন্ত রোপণকৃত গাছটি জীবিত থাকবে ঠিক তত দিন যত প্রাণী, পশুপাখি ও মানুষ সে গাছ থেকে ফুল, ফল ও ছায়া অর্থাৎ যেকোনো উপকার পাবে, তা রোপণকারীর আমলনামায় সদকায়ে জারিয়া হিসেবে লেখা হবে। রোপণকারী ব্যক্তি যদি মারাও যান তাহলে তাঁর আমলনামায় এ সওয়াব পৌঁছাতে থাকবে। যদি না জানিয়ে গাছ থেকে কোনো ফল খায় বা নিয়ে যায় তাতেও রোপণকারীর আমলনামায় সওয়াব পৌঁছে যাবে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব

Share.

Leave A Reply