আব্বাস হোসাইন আফতাব :
বাবা নুরুল ইসলাম জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী। পঁচিশ বছর বয়সী ছেলে মো. ফাহিম বাবাকে ব্যবসায় সহযোগিতা করে আসছেন। বাবার গড়ে তোলা শখের ছাদ বাগানেও সঙ্গী ছেলে। বাবা ছেলের ছাদ বাগানের সফলতা গ্রামের মানুষের মুখে মুখে এখন। ছাদ বাগানটি দেখে গ্রামের অনেকে ছাদ বাগান শুরু করেছেন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড কদমতলী গ্রামে বাবা ছেলের গড়ে তোলা ছাদ বাগানের কথা বলছি।
সরেজমিনে নুরুল ইসলামের পাকা ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায় বাহারি সব্জি ফলন পুরো ছাদ জুড়ে। শীতকালিন মৌসুমী সব্জির মধ্যে সারি সারি ফুলকপি, বাধাকপি, মূলা, টমেটো ও বেগুন। আরো রয়েছে, মরিচ, লাউ, লাল শাক, পিঁয়াজ, সিম, ধনিয়া পাতাসহ নানা ধরনের শাক-সবজি। সারি সারি পেঁপে গাছ, সব গাছেই ফলন এসেছে। ফলনে টুইটুম্বুর নুরুল ইসলামের বাড়ি মনে হচ্ছে যেন এক টুকরো সবুজ উদ্যান।
কথা হয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের সাথে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারে প্রতিদিন ভাতের সাথে সব্জি প্রয়োজন হচ্ছে। অধিকাংশ কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে সব্জি ফলিয়ে বাজারজাত করছে, তাতে অতিমাত্রায় বিষ ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। বিষমুক্ত সব্জির যোগান মেটাতে ও ছাদের সৌন্দর্য্য বর্ধনে মূলত তিনি ছাদ বাগান শুরু করেন।
২০ বছর আগে থেকে তাঁর ছাদ বাগান শুরু। শুধু বাড়ির ছাদেই নয়, বাড়ির আশেপাশে সব জায়গায় নানা প্রজাতির সবজি ও ফলমূলের চাষাবাদ। রয়েছে বাড়ির পেছনে দৃষ্টিনন্দন পুকুর। পুকুরে মাছ চাষ করছেন। পুকুর পাড়েও রয়েছে নানা জাতির আম গাছ, জাম, পেয়ারা, লেবু, আমলকি, কলা, আতা, বড়ইসহ নানা ধরনের ফল গাছ।
নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ফাহিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে গ্রীস্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে, সেসময় পুরো বাড়ি গরম হয়ে উঠে। ফাঁকা তপ্ত ছাদকে শীতল করতে এবং পরিবেশকে সহনীয় করতেই সবুজ বাগান করা। প্রকৃতির প্রেমে শখের বসেই বাবা ছেলে দুজনে বাগানে সময় দেন। বাড়ির ছাদে দুই হাজার বর্গফুটের আয়তনের মধ্যে বাড়ির ছাদে টব এবং ড্রামে পরম যতেœ বেড়ে উঠছে গাছগুলো। ব্যবসার কাজের পর যেটুকু সময় পান তার অধিকাংশ সময় তাঁরা এ বাগানেই সময় দেন। কোনো ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে নিজেরা জৈব সার তৈরি করে তা ব্যবহার করেন। প্লাষ্টিকের ড্রাম ও টবে চারা লাগানো হয়। এতে ভবনের কোনো ধরনের ক্ষতি হচ্ছে না। তবে খালি ছাদে দীর্ঘ মেয়াদি মাটি ব্যবহার করে কিংবা সহায়ক কিছু না দিয়ে ড্রাম কিংবা টব বসালে ছাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন যারা ছাদে বাগান করতে চান তাঁদের কাছে সতর্কতামূলক এই বার্তা দিয়েছেন তিনি।
নুরুল ইসলাম বলেন, পরিবারের ভেজাল মুক্ত ফল ও শাক-সবজির যোগান ও চাহিদা মেটানোর পর আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও পাঠাতে পারি। তিনি শাক-সব্জি বিক্রি করেন না।
যাদের বিশাল ছাদ খালি রয়েছে তাঁদের উদ্দেশ্যে নুরুল ইসলাম বলেন, দিন দিন ফসলি জমি কমে আসছে, কমছে সবুজ প্রকৃতি। বাড়ছে নগরায়ন। প্রকৃতিতে উষ্ণতা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। যাদের ভবনের ছাদ খালিয়ে রয়েছে, তারা যেন এভাবে সবুজ বাগান গড়ে তুলে। এতে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবারে বিষমুক্ত সবজির যোগান দেওয়া সম্ভব হবে।
উপজেলা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, “ছাদ বাগানটি দেখতে গিয়েছি। তাঁদের নিজেদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে ছাদ কৃষিতে। উপজেলার মধ্যে এত বড় পরিসরে ছাদ বাগান কোথাও নেই। ছাদ বাগানটি আরো সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজনে কৃষি কার্যালয় সহযোগিতা করবেন। ”
বাবা ছেলের শখের ছাদ বাগান
0
Share.