আফরোজা মুক্তা। জন্মের পর থেকে তিনি মা বাবার কাছ থেকে শুনতে পারেননি কোনো ভালোবাসার ধ্বনি। মা-বাবাকে কখনো চিৎকার করে ডেকে শোনাতেও পারেননি ‘ভালোবাসি’। জন্মের পর থেকেই তার মাতৃভাষা ‘ইশারা ভাষা’।
মুক্তার বাবা-মা কেউই কথা বলতে পারেন না। কানেও শুনতে পান না। ফলে ইশারা ভাষাতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাব বিনিময় হয়েছে তার। ইশারা ভাষাতেই মুক্তাকে তারা আদর যত্নে বড় করেছেন, ভালো শিক্ষা দিয়েছেন, পড়ালেখা শিখিয়েছেন।
মুক্তা এখন বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইশারা ভাষার সংবাদ উপস্থাপিকা। বাবা-মা এবং একমাত্র ছোটভাই কথা বলতে বা কানে শুনতে না পারলেও মুক্তা কথা বলতে পারেন, শুনতে পান এবং সব দিক থেকে বেশ চৌকসও। মুক্তার কারণেই তার বাবা-মা এখন গর্ববোধ করেন।
আফরোজা মুক্তা সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) জানান, নিঃশব্দ ইশারা ভাষাতেই তার শৈশব, কৈশর ও তারুণ্য কেটেছে। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর কল্যাণে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন নিয়মিত ইশারা ভাষার সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজ করছেন সফলতার সঙ্গে।
ইশারা ভাষা তার মাতৃভাষা হওয়ায় এই ভাষাতেই তার অসীম দক্ষতা। নিজে কথা বলতে এবং শুনতে পেলেও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি সহস্র মানুষের ভাষা ‘ইশারা’ এই ভাষা নিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে কাজ করতে চান আফরোজা মুক্তা।
মুক্তা বলেন, ‘আমার বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের সবাই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি। এ কারণে ইশারা ভাষার ওপর আমার দক্ষতা জন্ম থেকেই। বিষয়টি জেনে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ স্যার আমাকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ইশারা ভাষার সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন আমি মা-বাবা ভাইকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছি। এই ভাষা নিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে কাজ করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন ‘সারা বিশ্বে অনেক বড় একটা জনগোষ্ঠী বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি। তারা পারস্পরিক ভাব বিনিময় করে ইশারা ভাষার মাধ্যমে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে সকল গণমাধ্যম, বিনোদন মাধ্যম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে ইশারাভাষার গনগোষ্ঠীর জন্য কিছুই করে না। এই বড় জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত রেখেই সব ধরনের আয়োজন হয় বিশ্বব্যাপী। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি এবং সমাজের মূল স্রোতধারায় ইশারা ভাষাভাষিকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করতে চাই।’
মুক্তা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কুয়াইশ ভরাপুকুর গ্রামের আফজল তালুকদার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। এটি মুক্তার নানুবাড়ি। এখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। মুক্তার বাবা মো. মনজুরুল আলম দর্জির কাজ করে সংসার চালিয়ে সংসার চালিয়েছেন, মুক্তাকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন। মুক্তা বর্তমানে মা আরেফা খাতুন, একমাত্র ছোট ভাই মামুনুর রশিদ ইফতি ও বাবাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন।
সৌজন্যে : রাইজিংবিডি.কম