সিডিএর নির্মিত নগরীর কালুরঘাট রোড উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১০ সালে দায়ের করা দুটি মামলা চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় বিশেষ জজের আদালত থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করে দুদক বলছে, চট্টগ্রামের এ আদালত দুদকের অগোচরে এসব মামলার বিচার কাজ পরিচালনা করছিলেন। দুদকের আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই আদালত থেকে মামলা দুটি প্রত্যাহার করে উপযুক্ত অন্য আদালতে কেন বদলি করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই দুই মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সমসাময়িককালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের মামলা প্রত্যাহার করে বদলির আবেদন প্রথম বলে মনে করছেন দুদকের আইনজীবী। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
পরে খুরশীদ আলম খান জানান, কালুরঘাট রোড উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১০ সালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় করা একটি মামলায় ১০ জন এবং অপরটিতে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত বিশেষ বিভাগীয় জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে মামলা দুটির যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ১০ জানুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে।
কেন ওই আদালত থেকে প্রত্যাহার করার আবেদন করা হয়েছে এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদকের মহাপরিচালকের (আইন) একটি নথি আবেদনে যুক্ত করা হয়। ওই নথিতে বলা হয়, বিশেষ মামলা নম্বর ৩৩/২০১২ ও ৩৭/২০১২ বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত, চট্টগ্রামে বিচারাধীন। ওই আদালতে কোনো বিচারক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসেবে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত, চট্টগ্রাম দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এসব মামলায় কমিশন মনোনীত সব সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ না করে, কমিশনের পিপির আপত্তি সত্বেও সাক্ষ্যপর্ব সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং পরদিন আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার জন্য রাখা হয়।
তারপরের দিন কমিশনের পক্ষে সময় আবেদন দাখিল করলে তা না মঞ্জুর করা হয়। কমিশন পক্ষে মামলা প্রমাণার্থে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের উপস্থাপনের সুযোগ না দিয়ে রায় দেওয়া হলে মামলার ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব নয় এবং তার সুবিধা আসামিপক্ষ পাবে। এ অবস্থায় দুদক হাইকোর্টে আবেদন করেছে। হাইকোর্ট রুল জারি করে মামলা দু’টির কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন।
কালুরঘাট রোড উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় দুদকের দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার পৃথক পৃথকভাবে ২২ মামলায় ৪৭ প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
গত ২০ মে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ট্রাইব্যুনালে ২২টি মামলার চার্জশিট দাখিল করে দুদক। সেখান থেকে মামলাটি মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে পাঠানো হয়।
দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চল-২ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে নগরীর চান্দগাঁও থানায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সিডিএ’র ২৫ ইঞ্জিনিয়ার ও ২২ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুদকের পাঁচজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মোট ২২টি মামলা দায়ের করে। মামলায় ৪৭জনকে আসামি করা হলে ৬ তদন্তে ৬ জনের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
মামলার এজাহারে ২২ মামলার সবকটিতে সিডিএ’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুর হোসেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, নির্বাহি প্রকৌশলী নুরুল আলম, এম এ এন হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ মনজুর হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, মোহাম্মদ নুরুল আমিন ভূঁইয়া, সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান, রাজীব দাশ, মোহাম্মদ ইলিয়াস, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওসমান শিকদার, মোহাম্মদ হামিদুল হক, এস্টিমেটর সৈয়দ গোলাম সরোয়ার ও রুপম কুমার চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছিল।
মামলায় অভিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো হলেন- রেহানা ট্রেডিংয়ের জসিম উদ্দিন, মেসার্স আর আর এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ বশর, মেসার্স ফারা এন্ড কোম্পানির সৈয়দ মোহাম্মদ জহিরুল হক, মেসার্স বিল্ড টেক এসোসিয়েটস এর মোহাম্মদ ইউনুস গনি চৌধুরী, মের্সাস পি এইচ ইন্টারন্যশনাল ওয়াহিদুজ্জামান পিণ্টু, মেসার্স ফারিয়াজ কনস্ট্রাকশনের রফিকুল ইসলাম, মেসার্স ন্যাশনাল বিল্ডার্সের মোহাম্মদ শামসুল আলম, এম রহমান এসোসিয়েটসের আবদুস সালাম, নেজাম এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ও মেসার্স খালেদ এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ খালেদ বিন আলম, মেসার্স এস আই ইঞ্জিনিয়ারের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মেসার্স নাইস এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী চৌধুরী, মেসার্স আফসানা বিল্ডার্সের আব্দুস সালাম, মেসার্স এম এম আলম ব্রাদার্সের মোহাম্মদ নুরুল আলম, তায়েব ব্রাদার্সের মোহাম্মদ মমতাছির মামুন, মেসার্স আমান কর্পোরেশনের মোহাম্মদ আমান, জসিম এন্ড সন্সের এ কে এম জসিম উদ্দিন, মেসার্স সালেহ জহুর বিল্ডার্সের সালেহ জহুর, জেসি এন্টারপ্রাইজের নাছির উদ্দিন, মেসার্স মাসুদ এন্ড কোম্পানির মোহাম্মদ মাসুদ, এস বি ট্রেডিং এর কাজী বেলাল উদ্দিন,মেসার্স নুর মোহাম্মদ সেনিটারি এন্ড মার্টের মোহাম্মদ নূর মোহাম্মদ, মেসার্স আশা কনস্ট্রাকশনের নিতাই পদ চৌধুরী।