চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালে আসছেন বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম

0

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি
বদলে যাচ্ছে চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। উন্নত মানের আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষে এবার হাসপাতালে যোগ দিচ্ছেন আমেরিকা থেকে আসা একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই তাঁরা দেশে এসে পৌঁছলেন আমেরিকান সার্জন জোনাথন ঈগল এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ লেবি ঈগলসহ পুষ্টিবিদ ও দুই জন মহিলা নার্স। যোগ দিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সুশান্ত বড়ুয়া। এর ফলে জটিল রোগে আক্রান্ত ও অসহায় দুস্থ রোগীরা এখন হাতের নাগালেই পাবেন অভিজ্ঞ বিদেশী চিকিৎসক দ্বারা উন্নতমানের আধুনিক চিকিৎসা সেবা। এছাড়া এখন থেকে রোগীদের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতাল থেকেই করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টা ফার্মেসী সুবিধা তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে উন্নতমানের আধুনিক চিকিৎসা সেবা এখন হাতের নাগালেই পাওয়া যাবে চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাসপাতালের পরিচালক ডা. মং স্টিফেন চৌধুরী হঠাৎ মারা যান। তার মৃত্যুর পর হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। এরপর ডা. ডেবিট খান পরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই সময়ে হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা আরও করুন হয়ে উঠে। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ হাসপাতালের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে বর্তমান পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ২০১৮ সাল থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নেন ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। তিনি দায়িত্বভার নেয়ার পর হাসপাতালের প্রতি সাধারণ রোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এর মধ্যে রয়েছে ২৪ ঘন্টা হাসপাতালের ফার্মেসি খোলা রাখার ব্যবস্থা, স্টাফদের প্রত্যেকের জন্য নিজস্ব স্মার্ট পরিচয়পত্র, নার্সিং কোর্সে শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০ করণ, হাসপাতালের উন্নয়নে বিদেশী দুটি সেবা সংস্থার সাথে চুক্তি করেন। এই চুক্তির ফলে এবছর থেকে বিদেশী নামকরা চিকিৎসক এবং নার্স দিয়ে সেবা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর গরীব অসহায় রোগীদের জন্য দরিদ্র তহবিল থেকে সর্বাত্বক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালে দরিদ্র তহবিল থেকে ২৪ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের নিজস্ব তহবিল থেকে কুষ্ঠ চিকিৎসা ও সেবা কেন্দ্রে ৪২ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে ।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং জানান, কাপ্তাই-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬২ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে এই কার্যক্রম চলমান আছে। খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালে রয়েছে ২৪ ঘন্টা জরুরী বিভাগ সেবা, সপ্তাহের ৬ দিন বহিঃবিভাগ, পরিচ্ছন্ন অন্তঃবিভাগ, এক্সরে বিভাগ, কালার আল্ট্রা সোনলজি, উন্নত ল্যাবরেটরি সুবিধা, স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগ। এরমধ্যে এন্টি নেটাল ও পোস্ট নেটাল চেক আপ, সিজারিয়ান সেকশন ও জরায়ুসহ অন্যান্য স্ত্রীরোগে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। রয়েছে মেডিসিন বিভাগ, সার্জারি বিভাগ। এর মধ্যে জেনারেল সার্জারি ও শিশুদের ক্লাব ফুট বা মুগুর পায়ের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। দিনের ২৪ ঘন্টা অপারেশন থিয়েটার খোলা ও জরুরী অপারেশন সুবিধা, স্ট্রোক এবং প্যারালাইসিস ম্যানেজমেন্ট, বেবি ইনকিউবেটর। এছাড়া কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রামিং কার্যক্রম চালানো হয় এই হাসপাতালের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে বেসিক হেলথ ওয়ার্কাদের সাহায্যে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করা, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে আগ্রহী করে তোলা, সিসি, ইউএইচসি বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী রেফারেল নিশ্চিত করা, শিশুদের ইপিআই টিকা দানের ব্যাপারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা ও নিশ্চিত করা, গর্ভবতী মায়েদের এএনসি ও প্রসব পরবর্তী পিএনসি চেকআপ নিশ্চিত করা, ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি, ম্যালেরিয়া স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসমূহ সরবরাহ, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি করা উল্লেখযোগ্য।
সুত্রে জানা যায়, পার্বত্য এলাকার ট্রানজিট কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় চিকিৎসা সেবায় শত বছরের অধিক সময় ধরে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল। এক সময় এই অঞ্চলে কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় ব্যাপ্টিস্ট মিশনারী সোসাইটি (ইউকে) ১৯০৭ সালে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শতবর্ষী এই হাসপাতালে দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে সেবা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে দূর্গম পাহাড়ী এলাকার রোগীরা এখান থেকে সেবা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ভাবে সমাদ্রিত চিকিৎসকরা এই হাসপাতালে সেবা দিয়েছেন। দিনে দিনে চিকিৎসা সেবায় আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়ে উঠেছে হাসপাতালটি। বর্তমানে ১০০ বেডের জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে এই হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি ১৯১৩ সালে খ্রীষ্টিয়ান লেপ্রসী (কুষ্ঠ) সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটিও ৬০ শয্যার হাসপাতাল। ১৯৩৭ সালে এই হাসপাতালের সাথে চালু করা হয় নার্সিং ইনষ্টিটিউট। সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প চালু হয় ১৯৯১ সালে। ২০১৯ সালের মধ্যে হাসপাতাল তার অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠেছে। তাই নতুন প্রাণচাঞ্চল্যে এই হাসপাতালটি এতদ অঞ্চলের চিকিৎসা সেবায় শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এই হাসপাতাল ধনী গরীব সকলের জন্য সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

Share.

Leave A Reply