করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলায় সাধারণ জনগণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। এরমধ্যে নগরীসহ উপজেলা পর্যায়েও সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনওসহ সংশ্লিস্টরা। যাতে অভিযুক্তদের অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন সাজা প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র গেল দু’দিনেই নগরীসহ চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় ৪০৭ টি মামলা হয়েছে। অভিযানে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৩০ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নগরের কোতোয়ালি, নিউ মার্কেট, জামাল খান, জিইসি এবং দামপাড়া এলাকায় অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় মাস্ক ব্যবহার না করায় ৮০টি মামলা করে আদালত। এর বিপরীতে ১১ হাজার ৩শ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওমর ফারুক, রেজওয়ানা আফরিন এবং নুরজাহান আক্তার সাথী।
এছাড়া একই দিন ১৪ উপজেলাতেও অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। অভিযানে ৬৮ মামলায় ২১ হাজার ৭৪০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। তার আগের দিন মঙ্গলবার নগরীতে ৯০টি মামলায় ৪১ হাজার টাকা ও উপজেলায় ১৬৯ টি মামলায় ৪৩ হাজার ৮৫০ টাকা অর্থদ- আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।এদিকে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে এমন অভিযান চালিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের এ অভিযান অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে সংশ্লিস্টরা।জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘অভিযান শুরু হওয়ার আগ মুহুূর্ত পর্যন্ত হতাশায় ছিলাম। তখনও মানুষ ঠিক মতো মাস্ক পরতো না। তবে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ এখন মাস্ক ব্যবহার করছেন। যারা এ ব্যাপারে অসচেতন, তারাই কেবল পরছেন না। তবে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে, নির্দেশনা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নির্দেশনার পরও যারা আইন অমান্য করবে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হবে আদালত।’হাটহাজারীতে ২০ জনকে জরিমানা : মাস্ক না পরায় হাটহাজারী পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে ৭ হাজার ৪০০ টাকা অর্থদ- প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্লাহ্ধসঢ়; এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে, মাস্ক না পরায় ২০ জনকে ৭ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসময় জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়।পটিয়ায় দু’দিনে ৩০ জনকে জরিমানা : পটিয়ায় দুইদিনে ৩০ জনকে অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরমধ্যে গতকাল বুধবার সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ইনামুল হাসান ১০ জনকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেন। তার আগের দিন মঙ্গলবার ২০ জনকে ৮ হাজার জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহেমদ। অভিযানে মাস্ক ব্যবহারের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়।মিরসরাইয়ে ১৬ জনকে জরিমানা : করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার না করে বাজারে ঘোরাফেরা করার অপরাধে মিরসরাইয়ে ১৬ জনকে অর্থদ- দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে মিরসরাই পৌর সদরে ও মঙ্গলবার বিকেলে জোরারগঞ্জ বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এ সাজা দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা। এরমধ্যে গত মঙ্গলবার উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে ৮ জনকে ৪ হাজার টাকা ও বুধবার মিরসরাই পৌর বাজারে ৮ জনকে ৫ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনগণকে মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মোবাইল কোর্ট নিয়মিত চলনোর কথা জানিয়েছেন প্রশাসন।
চন্দনাইশে ১১ জনকে জরিমানা : স্বাস্থ্যবিধি না মানায় চন্দনাইশে ১১ জনকে অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ হোসেন এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল ও মাস্ক না পরায় পথচারী, সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত রিকসা ড্রাইভারসহ ১১ জনকে ১ হাজার ৪শ ৪০ টাকা জরিমানা করা হয়।