পারিবারিক সম্পত্তি বাঁচাতে রাঙ্গুনিয়ার আইনজীবি পল্টন দাশের কাছে আইনি পরামর্শ নিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তরুণী বিথী (ছদ্মনাম)। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষন ও ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তরুণী পৈত্রিক সম্পত্তির বদলে এখন নিজের অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য আইনের লোকের ধারে ধারে ঘুরছে। পুলিশ ধর্ষক আইনজীবি পল্টন দাশকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। পল্টন দাশ (৩২) রাঙ্গুনিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের অ্যাডভোকেট বঙ্কিমচন্দ্র দাশের ছেলে। তাদের বাড়ি উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে। ধর্ষনের শিকার প্রেমিকা বিথীকে মামলা করলে চট্টগ্রাম আদালতের কোন আইনজীবি তাঁর পক্ষে দাঁড়াবেনা পক্ষান্তরে সবাই পল্টনের পক্ষে দাঁড়াবেসহ নানাধরণের হুমকিও দেন পল্টনের সহযোগী এক নারী আইনজীবি।
■ সন্তান ভূমিষ্টের আনন্দ নয় সামাজিক অসম্মানসহ নানা হুমকিতে দিন কাটাচ্ছে বিথী
তরুণী বিথী জানান, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধের সমাধান খুঁজতে আইনজীবী পল্টনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। অল্পদিনেই আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠে দারুণ বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের মোহে রাঙ্গুনিয়ায় পল্টনদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল আমাকে। কিন্তু বন্ধুকে বিশ্বাস করাটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার জীবনে। বিথীর অভিযোগ, বিয়ের প্রলোভনে রাঙ্গুনিয়ায় নিয়ে তাকে প্রথম ধর্ষণ করা হয়।
বিথী জানান, ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রেমের অভিনয় করতে থাকেন আইনজীবী পল্টন দাশ। এভাবে বিয়ের প্রলোভনে প্রায় বিভিন্ন হোটেলে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতো বিথী ও আইনজীবী পল্টন। কিন্তু এক পর্যায়ে বিথী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ভোল পাল্টে যায় পল্টনের। সবকিছুই অস্বীকার করতে শুরু করেন তিনি। এঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেননি এবং রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বলেও জানান।
এদিকে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে শেষে অভিযোগটিকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
গত রবিবার (৬ জুন) এফআইআর রেকর্ড হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিকেলে অভিযুক্ত আইনজীবী পল্টন দাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে শুক্রবার (১১ জুন) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০১৭ সালে অ্যাডভোকেট পল্টন দাশের কাছে জমিজমার বিবাদ নিয়ে আইনি পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন বিথী। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়ের শুরু। মাঝেমধ্যে কথা হতো। এর মাঝে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বিথীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে অভিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট পল্টন দাশ। এমনকি আইনজীবী সমিতির দোয়েল ভবনে তার আইন প্র্যাকটিসের চেম্বারে ডেকে নিয়েও বিথীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন অভিযুক্ত ওই আইনজীবী। কিন্তু বিয়ের কথা বললে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করেন তিনি। এক পর্যায়ে শুধু সম্পর্ক অস্বীকারই নয় বিভিন্ন মাধ্যমে বিথীকে গর্ভপাত করতে চাপ দেন তিনি। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোর হুমকিও দেওয়া হয় বিথীকে।
ভুক্তভোগী বিথী বলেন, আট মাসের গর্ভাবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আনন্দ নয় বরং সামাজিক অসম্মানসহ নানা হুমকিতে দিন কাটাচ্ছি আমি। শুরুতেই আমি এমন সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানালেও বিয়ের কথা বলে এক বছর ধরে আমাকে শারীরিক শোষণ করে পল্টন। গর্ভধারণের সাত মাস হয়ে গেলে আমি তার পরিবারেও জানাই। কেউ আমাকে আশ্বস্ত করেনি বরং অসম্মান ও বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে। এরপর আমি আইনজীবী সমিতিতেও লিখিত অভিযোগ দিই। সেখানেও মীমাংসার পথে হাঁটেনি পল্টন। সে বারবারই আমাকে আইনজীবী হওয়ার দাপট দেখিয়েছে। সবসময় বলতো, ‘যাও মামলা কর আমি মামলাকে ভয় পাইনা। অ্যাডভোকেটের বিরুদ্ধে অন্য কোন অ্যডভোকেট মামলা নেবে না।’
দফায় দফায় তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিথী বলেন, ‘পল্টন আমাকে ও আমার পরিবারকে অনেকটা উন্মুক্তভাবেই হুমকি দিয়েছে। চট্টগ্রাম আদালতের তারিন নামের শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আমাকে ফোন করে হুমকি দেয়। আমার ব্যক্তিগত তথ্য পোস্টার করে পাঠানো হবে বলে জানিয়ে আমাকে কয়েক দফা হুমকি দেয় তারিন নামের ওই নারী।’
রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ বিথীর অভিযোগ আমলে নেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে হুমকি দিয়েছে পল্টন। অভিযোগ নিয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় গেলে তারা আমার অভিযোগ নেয়নি। সরফভাটার চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিলে তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সুরাহা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আমাকে আইনি আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন।’
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘ওই আইনজীবীকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টসহ সকল অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে সবকিছু বলা যাবে।’ #