যৌতুকের টাকা না দেয়ায় ‘স্বামীর দেয়া’ পেট্টোলের আগুনে দগ্ধ রাঙ্গুনিয়ার গৃহবধু ইয়াছমিন আকতার (৩০) কে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার রাতে তাকে সেখানে ভর্তি করেছেন স্বজনরা। তার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থার অবনতি ঘটায় শনিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ। এঘটনায় আটক বর্বর স্বামী সলিমুল্লাহ রাফেলকে আদালতে সোপর্দ করে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাঙ্গুনিয়া থানার উপপরিদর্শক মাহাবুব হোসেন। স্থানীয়ভাবে ইয়াবা কারবারী হিসেবে পরিচিত নির্যাতনের শিকার গৃহবধুর স্বামী সলিমুল্লাহ রাফেল (৩৪) একসময় রাঙ্গুনিয়ার কোদালা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে ছিল। তবে প্রায় চারবছর আগে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিস্কার করেন উপজেলা কমিটি।
ইয়াবা কারবারি রাফেল রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড গোয়ালপুরা গ্রামের সন্ধীপপাড়ার মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে। প্রায় ৪০ বছর আগে শফিকুল সন্ধীপ থেকে রাঙ্গুনিয়ার পূর্ব কোদালায় এসে সপরিবারে বসতি গড়েন। এলাকায় চোলাই মদ ও ইয়াবার খুচরা ব্যবসায়ি হিসেবে সে পরিচিত। ইয়াছমিন আকতার উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকার হারুনুর রশিদের মেয়ে। প্রায় সাতবছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ৪ বছরের একটা ছেলে সন্তান রয়েছে।
স্থানীয় নুরুল করিম বলেন, গ্রামে এমন কোন অপকর্ম নেই রাফেল করেনা। এলাকার যুব সমাজের মাঝে ইয়াবার বিস্তার ঘটিয়েছে সে। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হবার পর তাকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ থেকেও বহিস্কার করা হয়। উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে কেউ প্রতিবাদও করেনা। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন রিয়াজ বলেন, মাদকসহ নানা অপকর্মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে বহিস্কার করা হয়।
নির্যাতিত ইয়াছমিনের চাচা আবদুল মালেক বলেন, কয়েকমাস পরপর রাফেল ব্যবসার নামে টাকা দাবী করেন। আমার ভাই ও ভাবী মেয়ের সুখের আশায় ধারদেনা করে তার চাহিদা মেঠানোর চেষ্ঠা করে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে যৗতুকের দাবী মেঠাতে নাপারায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ১২টার পর রাফেল হঠাৎ ঘুমন্ত ইয়াছমিনের মুখ কাপড় দিয়ে বেঁেধ ফেলে। এরপর পেট্টোল ঢেলে স্ত্রীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুখ বাঁধা থাকায় অসহায় ইয়াছমিন চিৎকারও করতে পারেনি।
গৃহবধুর বাবা হারুনুর রশিদ বলেন, আমার মেয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় যখন মুখ বাঁধা অবস্থায় ছটফট করছিল তখন পাষন্ড স্বামী রাফেল গভীর রাতে আমাকে ফোন করে বলেন, ‘তোর মেয়েকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি, এসে নিয়ে যা’। শুক্রবার সকালে গিয়ে আমরা উদ্ধার করে মেয়েকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করায়।
চমেক হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ও বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক এ খালেদ বলেন, “পেট্টোলে দগ্ধ রোগীর অবস্থা আশংকাজনক। তাঁর শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাই ঢাকায় রেফার করা হয়েছে”।
রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, গৃহবধুর বাবা হারুনুর রশিদ শুক্রবার বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জামাতা সলিমুল্লাহ রাফেল এর বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা করেছেন। শনিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে জেল হাজতে পাঠান। আটকের পর থেকে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় এবং ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় রোববার অথবা সোমবার রিমান্ড আবেদনের শুনানী হতে পারে বলে তিনি জানান।