রাঙ্গুনিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’য় বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ- “সাম্প্রদায়িক অপশক্তির স্থান বাংলাদেশে হতে পারে না”

0

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি
“ বিমল জ্যোতি মহাস্থবির বৌদ্ধ ধর্মের একজন ভিক্ষু ছিলেন। কিন্তু তিনি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবধর্মের মানুষের প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে সমস্ত ধর্মের মর্মবানী হচ্ছে মানবসেবার মাধ্যমে সৌহার্দ্যরে সম্প্রীতি স্থাপন করা। মানুষের মঙ্গল করা। ধর্মের এই মর্মবানী সকলে ধারন করতে পারলেই পৃথিবীতে কোন হানাহানি, মারামারি এবং অশান্তি আর থাকবে না। আমাদের এই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই দেশে হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান, বাঙালী, মগ, চাকমা সকল ধর্মের সকল জাতির মানুষের যে সহঅবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক স¤পর্ক তা পৃথিবীতে বিরল। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। আমাদের এই দেশে মাঝে মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প মাথাছাড়া দিয়ে প্রভাব ফেলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আমাদের এই অসম্প্রদায়িকতা এই অপশক্তিকে সবসময় দমন করেছে। এখনও একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি আমাদের এই দেশকে সমাজকে হেয় করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সম্মিলিত শক্তির কাছে তারা অতীতে যেমন পরাভূত হয়েছে তেমনি বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও পরাভূত হবে। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি।সকল ধর্মের মানুষের মিলিত রক্ত¯্রােতের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ রচিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির স্থান বাংলাদেশে হতে পারে না।
বিমল জ্যোতি মহাস্থবির তিনি তার দয়া দিয়ে ভালবাসা দিয়ে, মমতা দিয়ে সমস্ত মানুষের ভালবাসা এবং শ্রদ্ধার মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন থেকে সব ধর্মের মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি তার আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব দিয়ে সব ধর্মের মানুষকে সহজে আপন করে নিতে পারতেন।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে রাঙ্গুনিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি এবং উপজেলার কেন্দ্রিয় সৈয়দবাড়ি ধর্মচক্র বিহারের অধ্যক্ষ প্রয়াত বিমলজ্যোতি মহাস্থবিরের জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভার্চুয়ালী বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি একথা বলেন। দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিন আয়োজিত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার। স্বাগত বক্তব্য দেন কেন্দ্রিয় সৈয়দবাড়ি ধর্মচক্র বিহার কল্যাণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিলাল তালুকদার। প্রধান জ্ঞাতি ছিলেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপসংঘরাজ ধর্মপ্রিয় মহাস্থবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিমান চন্দ্র বড়–য়া, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সুখবিলাস ফিসারিজ এন্ড প্লানটেশনের চেয়ারম্যান এরশাদ মাহমুদ, অনুষ্ঠান উদযাপন পরিষদের সভাপতি ধর্মসেন মহাস্থবির, সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ তালুকদার। বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু শীলরক্ষিত মহাস্থবির, বিনয়পাল মহাস্থবির, জিনালংকার মহাস্থবির, জ্ঞানরতœ মহাস্থবির, ধর্মপাল মহাস্থবির, দেবমিত্র মহাস্থবির, মৈত্রীপ্রিয় মহাস্থবির, অসীন জীনরক্ষিত মহাস্থবির, প্রদীপ কুমার বড়–য়া, অজিত রঞ্জন বড়–য়া, শাসনবংশ মহাস্থবির, পি.লোকানন্দ মহাস্থবির, শুদ্ধানন্দ মহাস্থবির, দীপংকর থের প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠানের প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান সুনন্দ ভিক্ষু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন বড়–য়া এবং যুগ্ম সমন্বয়কারী সুজিত তালুকদার।

Share.

Leave A Reply