শীত সবেমাত্র জেঁকে বসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সীতাকুণ্ডে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে খেজুর গাছের সুস্বাদু রস সংগ্রহের পেশায় নিয়োজিত গাছিদের। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু গাছি খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তবে আগামী মাসের আগে রস পাবার সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে একসময় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। গ্রামীণ সড়কের পাশে, পুকুর পাড়, খাল পাড়, সাগর পাড়, পাহাড়ের তলদেশ থেকে শুরু করে সর্বত্রই ছিল খেজুর গাছের ছড়াছড়ি। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে গ্রামের অবকাঠামো, রাস্তাঘাটসহ সার্বিক উন্নয়নের ফলে জনবসতি বৃদ্ধির সাথে সাথে নির্বিচারে খেজুর গাছ উজাড় করায় বর্তমানে সেই সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেলেও প্রকৃতিগতভাবে এখনো বেশ কিছু খেজুরগাছ ছড়িয়ে আছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। আর এই গাছগুলোই এখন ভরসা স্থানীয় গাছিদের।
শীত মৌসুমে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করে তারা একদিকে যেমন নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হন, তেমনি অন্যদিকে গাছিদের সংগ্রহ করা রস কিনে রসের সুমিষ্ট স্বাদ গ্রহণ করেন এলাকার মানুষ।
অবশ্য শুধু এলাকার মানুষই নয়, গাছিদের এই রস চলে যায় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায়। ফলে আরো অনেকেই শীতের সুমিষ্ট রসে ভেজা পিঠে-পুলি খাবার সুযোগ পান।
ফলে এ মৌসুমে একদিনও বসে থাকেন না গাছিরা। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে সীতাকুণ্ডে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকার সাথে সাথে গাছিরা তাদের নিজের খেজুর গাছের পাশাপাশি অন্যদের কাছ থেকে চুক্তিতে নেয়া খেজুর গাছগুলো কেটে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়ন, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, বারৈয়াঢালা ও সৈয়দপুরে খেজুর গাছ কাটা শুরু হয়েছে। এখন গাছ কাটলে আগে থেকে রস পাবার আশা করছেন গাছিরা। আবার অনেক গাছি আরো কয়েকদিন পরে গাছ কেটে রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া করবেন। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের উত্তর ভাটেরখীল সাগর উপকূলে গিয়ে দেখা যায় গাছিদের মধ্যে কেউ কেউ গাছ কেটে যাচ্ছেন আপন মনে। আবার অনেক খেজুর গাছ এখনো কাটা হয়নি এবার। এখানে নিয়মিত খেজুরের রস সংগ্রহকারী বিক্রেতা স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, এলাকায় এখন খেজুর গাছ কম। কিন্তু রসের চাহিদা অনেক। মাত্র অল্প কিছু লোকের কাছে পর্যাপ্ত গাছ আছে। তাদের কাছ থেকে চুক্তিতে গাছগুলো কিনে তিনি রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। প্রত্যেকটি গাছের জন্য ৩শ টাকা করে দিতে হয় মালিকদের। যতদিন রস সংগ্রহের সময় থাকবে ততদিন রস নেবেন তিনি। মাঝে-মধ্যে মালিককেও খাওয়ান। এভাবে শতাধিক গাছ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নিয়ে তিনি রস সংগ্রহ ও বিক্রি করে দৈনিক সব খরচ বাদ দিয়েও ২ হাজার টাকার মতো আয় করেন। প্রতি লিটার রস ৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন গতবছর। এ বছর দাম কিছুটা বাড়তে পারে আশা করে এখন গাছগুলো কেটে রস সংগ্রহের উপযোগী করছেন। আগামী মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরেই রস পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় আগের মতো রস পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন সৈয়দপুরের পশ্চিম সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আনোয়ার হোসেন, বৃদ্ধ নুরুন্নবী, আশরাফ উদ্দিনসহ কয়েকজন।
সীতাকুণ্ড কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, আসলে এই গাছটিকে কেউ মূল্যবান কাঠ গাছের মতো যত্ন করেন না। একটি গাছ কেটে আর লাগান না। তাই এটি হারিয়ে যাচ্ছে। সবার গ্রামীণ ঐতিহ্যের গাছটিকে যত্ন করা উচিত। আর তা হলেই আবারো শীতের সুমিষ্ট রসের ঘ্রাণে ম ম করবে গ্রামগুলো।