করোনা পাল্টে দিয়েছে ফেরদৌসের জীবন

0

আব্বাস হোসাইন আফতাব ঃ
গত বছর জুলাইয়ে করোনা সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় ঘরবন্দী ফেরদৌস আকতারের স্বামীর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। দুই সন্তান নিয়ে কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না তাঁরা। ফেসবুক গ্রুপ “উই ”(ওম্যান এ্যান্ড ই কমার্স- ফোরাম) এর সন্ধান পেয়ে ব্যবসা শুরু করেন ফেরদৌস। মাত্র ১০ কেজি মরিচ কিনে সকল প্রক্রিয়ার ভিডিও আপলোড দেয়ার পর গ্রুপে ওই দিন ৬ জন মরিচের গুঁড়ার অর্ডার দেন। প্রতিদিন মরিচ, হলুদ আর মসলার গুঁড়ার অর্ডার বাড়তে থাকতে। ওই মাসে লাখ খানেক টাকার মসলার গুঁড়া বিক্রি হয়। এরপর থেকে ফেরদৌসকে আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি। করোনা পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন। এখন ফেরদৌসের ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সারাদেশে নিয়মিত ক্রেতা ৫০০ জনের ওপরে। গত এক বছরে ১ হাজার ১১২ জনের কাছে গ্রুপের মাধ্যমে ১১ লাখ ২০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের গোচরা এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন ফেরদৌস।
শুক্রবার (২৫ জুন) বিকেলে ফেরদৌস আকতারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অর্ডার করা মরিচ আর হলুদের গুঁড়া প্যাকেটজাত করছেন ফেরদৌস। কথা হয় তাঁর সাথে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বছর আগে একেবারেই সাদামাটা জীবন ছিল তাঁর। করোনায় ঘরবন্দী ছক বাঁধা জীবন। এসব ছেড়ে সারাদিন ফেসবুকে পণ্যের অর্ডার চেক করা। অর্ডার নেয়া, পরিমাপ করে পণ্য প্যাকেট করে পৌঁছে দেয়া কুরিয়ারে। তারপর তদারকি। গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত ফোনে ফোনে আলাপ। পৌঁছে গেলে স্বস্তি। তাঁর রোজকার কাজের রুটিন অনেকটা এরকম।
ফেরদৌস আকতার বলেন, এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি। পলিটেকনিক্যালেও দুই বছর পড়ালেখা করেছেন। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তাঁর পড়ালেখা থমকে যায়। তখন তাঁর স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হবেন। উই গ্রুপের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আকতার নিশা’র উৎসাহ পেয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকার উত্তরা ও মিরপুর থেকে সবচেয়ে বেশি অর্ডার হয়। হাটহাজারীর মিষ্টি মরিচর গুঁড়ার চাহিদা বেশি ক্রেতাদের। এছাড়া হলুদ, ধনিয়া, মেজবানি মসলা, বিরিয়ানি মসলা, মাংসের মসলা,জিরা, বিন্নি চাল, শীমের বীচি, আতপ চালের গুঁড়াও তিনি বিক্রি করেন। পবিত্র কুরবানি ঈদ উপলক্ষে মসলার অর্ডার বেড়েছে তাঁর। অর্ডার নেয়ার পর সপ্তাহে দুইদিন তিনি পণ্য ডেলিভারি দেন। প্রতি মাসে তাঁর লাখ খানেক টাকার পণ্য বিক্রি হয়। তবে তাঁর একটি সমস্যা স্থানীয়ভাবে কুরিয়ার না থাকায় চট্টগ্রাম নগরের গিয়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে হয়। এজন্য তাঁর খরচ বেশি পড়ে। খরচটি তিনি ক্রেতার কাছ থেকে নিতে পারেন না। “কুক মাসালা” নামে এই পণ্যের ব্যবসা
ব্যাপক পরিসরে করতে চান তিনি।
ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পণ্য অর্ডার নিয়েছেন চাকুরিজীবি আবদুর রহিম । তিনি বলেন, “ ফেরদৌস আকতারের মসলা ভেজালমুক্ত, দামও সাধ্যের মধ্যে। কয়েকমাস ধরে আমি বাজারের মসলা অর্ডার করিনা। আমার ঘরে রান্নায় এই মসলা ব্যবহার করা হয়।
জানতে চাইলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোনিয়া সফি বলেন, ফেরদৌস একজন সফল উদ্যোক্তা। নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে অবশ্যই ফেরদৌসের মতো উদ্যোগী হতে হবে। ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেকদূর নিয়ে যায়।

Share.

Leave A Reply