এম এ হোসাইন : দিনমজুর নুরুল ইসলাম (৫২) গতমাসের ১৪ তারিখ সর্বাত্বক লকডাউনের পর থেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্ত্রী ও ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন যাচ্ছে তাঁর। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক’র সদস্যরা গিয়ে তাঁদের ঘরে চাল,ডাল,তেলসহ আট পদের খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন। খাদ্য সামগ্রী পেয়ে খুশি উপজেলার ইছাখালী এলাকার দিনমজুর নুরুল ইসলাম।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ লকডাউনের পর থেকে কাজ নেই। কয়েকদিন ধরে ঘরে চাল-ডাল কিছু ছিলনা। কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। চাল-ডাল ও অন্যান্য জিনিসগুলো দিয়ে অন্তত কিছুদিন চলবে। ”
গত ২০ দিনে নুরুল ইসলামের মতো আরো ১৭০ কর্মহীন দুস্থ পরিবার খাদ্য সামগ্রী পায়। মূলত স্বেচ্ছায় রক্তের সন্ধানে কাজ করেন এই সংগঠনটি। এলাকার কোথাও কোনো অসুস্থ রোগীর জরুরী রক্তের প্রয়োজন হলে ছুটে যান সংগঠনের সদস্যরা। রক্তদানের পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজনে খাদ্য সামগ্রী, শীতবস্ত্র, ঈদের পোশাক বিতরণ, বৃক্ষ রোপণ, শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, অগ্নি দূর্গতদের সহায়তা ও ক্যান্সার রোগীদের আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয় এই সংগঠন থেকে। ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপের মাধ্যমে কাজ করেন তাঁরা। এই গ্রুপের রয়েছে ২০ হাজার সদস্য।
রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক’র অ্যাডমিন হাবীবুর রহমান বলেন, “ সংগঠনটি শুধু রক্ত দানের কাজ নয়, দেশের জরুরী যে কোনো মূহুর্তে কাজ করে যাচ্ছে। গত বছর করোনার প্রথন ঢেউয়ে ৩০০ দুস্থ পরিবারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়। এবারও ৩০০ পরিবারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
সংগঠনের অন্য অ্যাডমিন শহীদুল ইসলাম শহীদ বলেন, “ লকডাউনে দুস্থ মানুষ ছাড়াও সাধারণ অনেকের অবস্থা খুব খারাপ চলছে। যারা লজ্জায় কাউকে বলতে পারছেন না। আমরা তাঁদের টার্গেট করে গোপনে তাঁদের ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। খাদ্য সামগ্রী দেয়ার সময় অনেকেই ছবি তুলেন। যিনি নিচ্ছেন তিনি অনেক সময় সংকোচ করেন। তাই ছবি না তুলে আমরা কর্মহীন মানুষের পরিবারে গিয়ে খাবার পৌছে দিই।”
সংগঠনের আরেক অ্যাডমিন আদনান ফাহিম বলেন, “ সংগঠনের উপদেষ্ঠা প্রবাসী ও সংগঠনের সদস্যরা নিজেরা টাকা তুলে কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যতদিন লকডাউন থাকবে ততদিন এই কর্মসূচি চলবে।”
সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু এই সংগঠনের। শুরু থেকে গড়ে প্রতি মাসে রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে অন্তত ৩০ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করছেন তাঁরা। এভাবে গত কয়েক বছরে প্রায় দুই হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছে সংগঠনটির সদস্যরা। তাঁদের কাছ থেকে রক্ত পেয়েছেন গর্ভবতী মা, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী, ব্লাড ক্যানসার, কিডনি রোগী ও দুর্ঘটনার শিকার মানুষজন। এছাড়া সংগঠনের সদস্যরা ফেসবুকের মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের জন্য রক্তের প্রয়োজন হলে যোগাড় করে দেন।
রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংকের প্রধান উপদেষ্ঠা মাহাবুবুল আলম সিকদার বলেন, “ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা প্রতিনিয়ত রক্তদানে কাজ করছে। করোনা পরিস্থিতির কারনে এবার লকডাউনে কর্মহীন দুস্থদের ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচি চালাচ্ছেন। সকলে ব্লাড ব্যাংক’র এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা করবেন এই প্রত্যাশা করছি।”
রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ বলেন, সমাজের অনেক তরুণ বাজে কাজে অযথা সময় নষ্ট করে। বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে যায় অনেকে। এদের সবার জন্য রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক উদাহরণ হতে পারে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, “ রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক’র সদস্যরা সরকারি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে প্রশাসনকে একাধিবার সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সার্বিক কর্মকান্ড প্রশংসনীয়।”
কারো রক্তের প্রয়োজনে ছুটেন, আবার দুস্থ পরিবারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন তাঁরা
0
Share.