রাঙ্গুনিয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের জায়গা-বাড়িঘর দখলে মরিয়া প্রভাবশালীরা

0

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি
রাঙ্গুনিয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের জায়গা ও ঘর বাড়ি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালীরা। জায়গা দখল করতে প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করছে তাঁদের। এমন অভিযোগ করছেন উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজাভুবন এলাকার এক সনাতন সম্প্রদায় পরিবার। এই বিষয়ে থানা পুলিশকে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো কাজ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ ওই পরিবারের। সনাতন সংখ্যালঘুর জায়গা দখল করতে এমন নির্মম কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন সনাতনী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। প্রভাবশালীদের রোষানল থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া তাঁরা স্থানীয় সাংবাদিকদেরও লিখিত অবহিত করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সনাতন সম্প্রদায়ের জায়গাটি তাঁদের মৌরশী খতিয়ানভুক্ত জায়গা। জায়গার অন্যতম মালিক লিটন শীল দীর্ঘ ১২ বছর আগে আদালতে মামলা করেন। সম্প্রতি মামলাটি রায় তাঁদের পক্ষে যায় এবং প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একাধিবার ওই জায়গায় ঘেড়া দেয়ার চেষ্ঠা করে প্রতিপক্ষ আবদুস ছমদসহ সংঘবদ্ধ লোকজন। এর আগে অবৈধভাবে বসতভিটায় ঢুকে ঘরের টয়লেট ভাংচুর করে। এই সময় প্রতিপক্ষ লোকজন তাঁদেরকে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়। ওই পরিবারে একজন বয়স্ক পুরুষ সদস্য ও দুইজন নারী রয়েছেন। ঘরের অন্যান্য পুরুষ সদস্যরা প্রবাসে থাকায় প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তাঁদের। স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের প্রত্যক্ষ মদদে প্রতিপক্ষরা আরো বেপরোয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন সংখ্যালঘু পরিবারটি।
সরেজমিনে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজাভুবন এলাকায় গিয়ে কথা হয় মধু সুদন শীলের সাথে। তিনি বলেন, “ স্থানীয় শওকত আলী আমার স্বাক্ষর নকল করে ও জাল দলিল তৈরি করে আবদুস ছমদের কাছে জায়গা বিক্রি করেছেন। আমি কারো কাছে জায়গা বিক্রি করিনি। দুজনে আমার জায়গা ও ঘর দখলে নিতে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
পরিবারের নারী সদস্য গীতা শীল বলেন, “ আদালতের রায় আমাদের পক্ষে রয়েছে। এছাড়া আদালত আবদুস ছমদসহ প্রতিপক্ষ লোকজনের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাঁরা আমাদের বসতভিটায় এসে বারবার জায়গা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত আমরা ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। ”
মধু সুদন শীলের বাড়ির পাশে অভিযুক্ত আবদুস ছমদের বাড়ি। ওইদিন তাঁর বক্তব্য নিতে তাঁদের বাড়িতে গেলে আবদুস ছমদ উল্টো সংখ্যালঘু পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাঁদের মারধরের শিকার হয়ে চিকিৎসা নেয়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখান। তিনি বলেন, স্থানীয় শওকত আলীর কাছ থেকে তাঁরা জায়গাটি কিনেছেন। শওকত আলীর কাছে মধু শীল জায়গা বিক্রি করেছেন। এই সময় তিনি আদালতের রায়ের স্থগিতাদেশের একটি ফটোকপি দেখিয়ে বলেন রায়ের পর আদালত রায়টির স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ”জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ ছৈয়দ তালুকদার বলেন, ‘দুই পক্ষের সাথে একাধিকবার বৈঠক করার পরও বিষয়টি সমাধান করা যায়নি।”
রাঙ্গুনিয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট পংকজ চৌধুরী বলেন, “সংখ্যালঘু পরিবারটির পৈত্রিক সম্পদ অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখলের পাঁয়তারা করছে স্থানীয় আবদুল ছমদ নামে এক ব্যক্তি। এই নিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারটির উপর বার বার হামলা ভাংচুর ও ভয়ভীতি অব্যাহত রেখেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানায় এবং তাদের নিরাপত্তা বিধানসহ তাদের অধিকার যেন বলবৎ থাকে সেই ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিল্কী বলেন, “সংখ্যালঘু পরিবারের উপর কোনপ্রকার নির্যাতন করা যাবে না। এই ব্যাপারে ইতিপূর্বে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” প্রতিবেদন- আব্বাস হোসাইন আফতাব

Share.

Leave A Reply