রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় একটি মাল্টিপারপাস স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও একটি আন্তর্জাতিক মানের সুপার স্পেশালাইজড নার্সিং ইনষ্টিটিউট স্থাপন হতে যাচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের গুনগুনিয়া বেতাগী এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের উপহারস্বরূপ দেওয়া ১১০ একর পরিত্যক্ত জমিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ট্রাস্টের অর্থায়নে এই হাসপাতাল ও নার্সিং ইনষ্টিটিউট হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যের ডিজি প্রকল্পের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা.হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেব প্রসাদ চক্রবর্তী প্রমুখ। পরে তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
এরআগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুই সদস্যের প্রতিনিধি আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার আলী হুমাইদ আলদিরী ও প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ মুবারক আল মেহরিবী রাঙ্গুনিয়া সফর করেছিলেন। এসময় হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে স্থানীয়দের আগ্রহে অভিভূত হন তারা। তাঁর আগে ২০১৪ সালে আরব আমিরাতের শীর্ষ স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা আরটেক’র প্রধান প্রকৌশলী আসাদ আল খিলালি ও প্রকৌশলী ওয়ায়েল প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছিলেন। তারা ১১০ একরের প্রকল্প এলাকায় ২৫ হাজার বর্গফুটের হাসপাতাল নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেছিলেন।
সূত্র জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুনগুনিয়া বেতাগী এলাকায় অবস্থিত নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের ১১০ একর পরিত্যক্ত জমিতে একটি মাল্টিপারপাস স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও একটি আন্তর্জাতিক মানের সুপার স্পেশালাইজড নার্সিং ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে ৬৪ শয্যা দিয়ে শুরু করা হলেও ক্রমান্বয়ে তা ১২০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। আধুনিক গাইনি সেবা নিশ্চিত করতে একটি অপারেশন থিয়েটারকে সার্বক্ষণিক দু’জন সার্জনসহ প্রস্তুত রাখা হবে। অপর অপারেশন থিয়েটার ব্যবহৃত হবে জেনারেল সার্জারিতে। মা ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নত হাসপাতালগুলোর মতো সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে নির্মিতব্য রাঙ্গুনিয়া শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান হাসপাতালে। এটিকে বাংলাদেশের অন্যতম বিশেষায়িত জেনারেল হাসপাতালে পরিণত করা হবে। রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরব আমিরাত সফরকালে সে দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় রাঙ্গুনিয়ায় তাদের পরিত্যক্ত ভূমিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি নজরে আনলে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন তারা। ২০২০ সাল নাগাদ হাসপাতালটির নির্মাণ কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে চট্টগ্রামে আসেন তখনকার আরব আমিরাতের বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। এসময় তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও রাঙ্গুনিয়ায় স্থাপিত রওশন পল্লী দেখার সময়ে এরশাদের কাছে রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী নদীর তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে সুবিশাল জায়গাটি দেখে সেখানে একটি প্রাসাদ ও অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমিরাতের বাদশার পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী এরশাদ সরকার মাত্র ১০১ টাকা প্রতীকী মূল্যে তাকে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকায় ১১০ একর জমি হস্তান্তর করেন। প্রতিবেদন- আব্বাস হোসাইন আফতাব