আসন্ন পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের নজরদারি শুরু হওয়ার আগেই বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, দেশীয় পেঁয়াজ উৎপাদনের এই ভরা মৌসুমে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোগ্যপণ্যের দেশের বৃহৎ পাইকারিবাজার খাতুনগঞ্জে রমজানে প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসুর, খেসারি ডালের দাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল (সোমবার) খাতুনগঞ্জে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হয়েছে ২২০০-২৫৫০ টাকার মধ্যে। গত এক মাস আগেও একই মানের ছোলা ১৯২০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল মিয়ানমারের ছোলা বিক্রি হয়েছে ২৫৫০ টাকা মণ দরে। বেড়েছে মটরের দামও। স্বাভাবিক সময়ে বাজারে প্রতি মণ মটর বিক্রি হয় ১০০০-১১০০ টাকায়।
কিন্তু গত এক মাসের মধ্যে দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে মটর বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৪৫০ টাকার মধ্যে (কেজি ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা)। আমদানিকৃত মসুর ডালের দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে মণে প্রায় ৪০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া (মোটা জাতের) মসুর বিক্রি হচ্ছে ২৪২৫ টাকা (৫৭ থেকে কেজি ৬৫ টাকা) দামে। যা এক মাস আগে ২০৫০ টাকার (কেজি ৫৫ টাকা) নিচে বিক্রি হয়। সম্পূর্ণ দেশীয় উৎপাদনে দেশের খেসারি ডালের চাহিদা মিটে। আমদানি পণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে খেসারির দামও। মাত্র এক মাস আগেও বাজারে প্রতি মণ খেসারি বিক্রি হয়েছে ২০৫০ টাকার (কেজি ৫৫ টাকা) নিচে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ টাকার উপরে।
এদিকে, দীর্ঘ দিন ধরে অস্থির রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় আরেক ভোগ্যপণ্য চিনির বাজার। গত এক-দেড় মাস আগে বাজারে থাকা বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রতি মণ চিনি বিক্রি হতো ২১০০ টাকার নিচে। এই সময়ের মধ্যে ২৫০ টাকার বেশি বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ থেকে ২৩৬০ টাকায়। বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি মণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েলের দাম ঠেকেছে ৩৮৫০ থেকে ৩৯০০ টাকায়। যা এক মাস আগেও ৩৪০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে। প্রতি মণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪২০০ টাকায়। যা গত মাসে ৩৮০০ টাকার নিচে ছিল। গত মাসে প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৪১০০ টাকার মধ্যে। একই সয়াবিন এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে বর্তমানে দেশি, ভারতীয় ও হল্যান্ডের পেঁয়াজ রয়েছে। এরমধ্যে পাইকারিতে প্রতি কেজি ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৩৫-৩৬ টাকা, খাস খালী পেঁয়াজ ২৯-৩১ টাকা ও বেলেডাঙ্গা ২৮-২৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ভারতীয় এসব পেঁয়াজের মধ্যে নাসিক ৪২-৪৫ টাকা, খাসখালী ৩৬-৩৭ টাকা ও বেলেডাঙ্গা পেঁয়াজ ৩৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হতো। সেই হিসেবে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেয়াঁজের দাম কমেছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। গত সপ্তাহে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মেহেরপুর ৩০-৩২ টাকা এবং ফরিদপুর ৪০-৪২ টাকা। এক সপ্তাহে কেজিতে ৫-৭ টাকা পর্যন্ত কমে বর্তমানে প্রতিকেজি মেহেরপুরের পেঁয়াজ ২৬-২৮ টাকা এবং ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
একাধিক পাইকারি ক্রেতার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, অতীতে পবিত্র শবে বরাতের আগে থেকেই রমজানের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা হলে প্রশাসন নজরদারির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু এবারে প্রশাসনের নজরদারির প্রস্তুতির আগেই পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তারা যে হারে দাম বাড়িয়েছে রমজানে বরং কিছু পণ্যের দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ক্রেতাস্বার্থ রক্ষায় তারা সারাবছরই অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান নিয়মিত চলছে। তবে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে তাদের বাড়তি প্রস্তুতি আছে। ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে তাদের অভিযান আরো জোরদার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক তাদেরকে ডেকে এসংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, পণ্যমূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথেও বৈঠক করবেন জেলা প্রশাসক। অতিশীঘ্রই জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত অভিযান পরিচালিত হবে।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, প্রতিবছর রমজানের আগেই নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির একটা প্রবণতা থাকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তবে গত একবছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ভোগ্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেশি। এরপরও আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের আহ্বান- যাতে পণ্যের আমদানি খরচ ও লাভের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য বেচাকেনা করেন। কোন পণ্যের দাম অন্যায্যভাবে যাতে না বাড়ায়। আর পচা-বাসী খাবার যাতে কেউ বিক্রি না করে এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেকোন অতি মুনাফাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন।