১৭টি প্রাণ, আনন্দভ্রমণ ও ‘একটি মানবিক বিয়ে’

0

কবির য়াহমদ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তার এই আগমনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে হেফাজত ইসলাম ব্যাপক বিক্ষোভ করেছিল। মোদির সফরকে প্রতিহত করার আগাম ঘোষণা দিয়ে সারাদেশে বিশেষত ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় যে সহিংস ঘটনা ঘটে সেগুলোতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৭ জন। এই ঘটনায় হেফাজতের দাবি ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যার হিসাবে মৃত্যু যাই হোক প্রতিটি মৃত্যুই বেদনাদায়ক এবং সরকারি-বেসরকারি যে সম্পদহানি হয়েছে সেটাও উল্লেখের দাবি রাখে। এইধরনের ঘটনা যেকোনো মানুষকে পীড়িত করবে। আমাদেরকেও করেছে, আমরা চাই না এমন দুঃখজনক ঘটনা আর ঘটুক, একই সঙ্গে দাবি করি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ দোষীদের যথাযথ শাস্তির।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাষ্ট্রীয় সফরে তার ঢাকায় আগমন। এখানে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত বিশ্বাস, নীতির প্রতি আমাদের আপত্তি ছিল, থাকতেই পারে; এজন্যে আমরা ব্যক্তিগতভাবে এর প্রতিবাদ করতেই পারি, কিন্তু ব্যক্তিগত এই প্রতিবাদের সীমা যদি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির বাধা হয়ে দাঁড়ালে সেখানে রাষ্ট্র তার শক্তি প্রয়োগ করবেই। আমাদের যে প্রতিবাদ সেটা প্রতিবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত ছিল, এটা কোনোভাবেই প্রতিরোধের পর্যায়ে গেলে সেটা রাষ্ট্রের প্রতি যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে যায়। হেফাজত ইসলাম নামের কট্টরপন্থী ধর্মীয় সংগঠন সেটাই করেছে এবং সেখানে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তার দায় তারা এড়াতে পারে না।
হেফাজতে ইসলাম নিজেরাই সাম্প্রদায়িক সংগঠন। এই সংগঠনের নেতাদের অধিকাংশই ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। সংগঠনটিকে অরাজনৈতিক বলা হলেও এটা আদতে রাজনৈতিক আদর্শ বিশেষত ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে মরিয়া। এই দলের নেতারা কট্টরপন্থী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। সংগঠনটির নেতারা সারাদেশে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-ধর্মীয় সম্মেলনে যে সকল মতবাদ প্রচার করে থাকেন, সেখানে থাকে অন্য ধর্ম বিশেষ করে হিন্দু ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষ, বিধর্মীদের প্রতি বিদ্বেষ, নারীদের প্রতি বিদ্বেষ; একই সঙ্গে তাদের যে কর্মসূচি সেগুলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বানাতে মরিয়া। তারা রাজপথে প্রকাশ্যে স্লোগান দেয় ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’। বাংলাদেশের জাতির পিতার প্রতি তাদের বিদ্বেষ সহজাত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের প্রতি তাদের আপত্তি ঐতিহাসিক। তাদের পূর্বসূরিদের বেশিরভাগই একাত্তরের বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। সেই হিসেবে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের বিদ্বেষ পূর্বসূরিদের ধারাবাহিকতা মাত্র।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর উৎসবে তারা কলঙ্কলেপন করতে চেয়েছিল। করেছেও সহিংসতার মাধ্যমে ১৭ প্রাণের অপচয়ে। এখানে নরেন্দ্র মোদির আগমন তাদের কাছে স্রেফ একটা উপলক্ষ ছিল, লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন বানচাল ও বঙ্গবন্ধুকে অপমান। মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে দেশের কয়েকটি এলাকায় যে সহিংস ঘটনা, আগুন, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে সেখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এই প্রাণের অপচয়ের এক সপ্তাহের মাথায় গত শনিবার ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব এবং এই সময়ে সংগঠনটির মুখ্য নেতা মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক এক নারীসহ অবরুদ্ধ হন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে। অবকাশযাপনে তিনি গিয়েছিলেন সেখানে। যেতেই পারেন কিন্তু ওই নারীর পরিচয় নিয়েই বিশাল বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ওই নারীকে তিনি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বললেও নাম বলেছেন প্রথম স্ত্রীর, আবার কথিত ওই স্ত্রী তার নিজের সম্পর্কে যা বলেছেন সেটা মামুনুলের কথার সঙ্গেও মেলে না। মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা নারীর নামে রিসোর্ট রুম বুকিং না দিয়ে তিনি দিয়েছেন ঘরে থাকা তার স্ত্রীর নামে। এরপর খবর পেয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অবরুদ্ধ মামুনুলকে উদ্ধার করতে এলে তিনি তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে ফেলে রেখে স্থান ত্যাগ করেন। বাসায় ফেরার পর মামুনুল হক তার ভাইদের নিয়ে ফেসবুকে লাইভ এলেও রিসোর্টে নিয়ে যাওয়া কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে সামনে উপস্থাপন করেননি, এমনকি ওই নারীকে তার বাড়িতে নিয়েও যাননি। ওই ফেসবুক লাইভে মামুনুল তার ভাইদের সাক্ষী রেখে জানান, দুই বছর আগে তিনি তার সহকর্মী হাফেজ শহিদুল ইসলামের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ধর্মীয় মতে বিয়ে করেছেন। রিসোর্টে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নিজের স্ত্রীকে টেলিফোনে এও বলেছেন, ওখানে ঝামেলা হয়ে গেছে বলে শহিদুল ইসলাম ভাইয়ের স্ত্রীকে দ্বিতীয় স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছেন। বাসায় এসে স্ত্রীকে সব খুলে বলবেন বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
৩ এপ্রিলের রিসোর্ট-কাণ্ডের পর মামুনুল হক পরেরদিন সকালে ফেসবুকে ‘একটি মানবিক বিয়ের গল্প’ শিরোনামের এক নাতিদীর্ঘ লেখা লিখেন। যেখানে ‘মানবিক বিয়ে’ নামের এক অদ্ভুত উপাখ্যানে জনৈক ‘হাফেজ শহিদুল ইসলাম তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের একজন’ বলে জানান। সম্পর্কের গভীরতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজে যে দু-চারজন সহযোগী তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শহিদুল’, এবং এই সম্পর্কের ব্যাপ্তি তাদের পরিবার পর্যন্ত। মামুনুলের ভাষায়- সম্পর্কের টানাপড়েনে তাদের সংসার ভাঙে। তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করে বিয়ে করেন জান্নাত আরাকে। তার ভাষ্যমতে, হাফেজ শহিদুল নতুন সংসার গড়েন এবং শহিদুলের স্ত্রী অসহায় হয়ে তার শরণাপন্ন হন। মামুনুলের দাবি, ‘ইসলামী দৃষ্টিকোণ এবং অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে তিনি তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ’ করেন। তিনি জানান, ‘একজন বেগানা নারীর সাথে এভাবে সম্পর্ক রাখা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেই, যতদিন তার অভিভাবকত্বের প্রয়োজন হবে আমার, তাকে বেগানা হিসেবে রেখে অভিভাবকত্ব করবনা, বরং ইসলামী শরীয়তের আলোকে বৈধ একটা সম্পর্ক তৈরি করে নিব। বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সাথে কথা বলি এবং এ বিষয়ে তাদেরকে জানিয়ে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিবাহের কালেমা পড়ে বিবাহ করে নেই। দু বছর যাবত এভাবেই মানবিক ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আমি তার অভিভাবকত্ব করছি এবং একজন অসহায় নারীর দায়িত্ব গ্রহণ করে একটি পুণ্যের কাজ করেছি বলে বিশ্বাস করি।’ (৪ এপ্রিল ২০২১, ফেসবুক, সময় সকাল ৮টা)
ফেসবুকে মামুনুল হক এই স্ট্যাটাসকে ‘মানবিক বিয়ে’ শিরোনাম দেন, কিন্তু এই মানবিক বিয়ের কনেকে তিনি বউ হিসেবে ঘরে তুলে নেননি, অর্থাৎ পারিবারিক স্বীকৃতি দেননি। যে বিয়েকে মানবিক বিয়ে বলছেন তিনি সেই নারীর প্রতি মানবিক হওয়া ত দূরের কথা ন্যূনতম সামাজিকও হতে পারেননি। পরিবারের কাছে গোপন রেখেছেন (স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে প্রমাণিত, বোনের সঙ্গে মামুনুলের প্রথম স্ত্রীর কথোপকথনে প্রমাণিত), সংগঠনের নেতাদের কাছে গোপন রেখেছেন, এমনকি যে রিসোর্টে তিনি ওঠেছিলেন সেখানেও সঙ্গীর নাম লিখতেও তথ্য গোপন রেখেছেন। উপরন্তু সেই স্ত্রীর বাড়ি কোথায়, বাবার নাম কী সেটাও তিনি সঠিকভাবে বলতেও পারেননি।
মামুনুল হকের এই তথ্যের গরমিল আর উদ্ধারের পর একাকি চলে যাওয়াও প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেউ কি নিজের স্ত্রীকে এভাবে বিপদে ফেলে রেখে একাকি চলে যায়? সৎ এবং সত্য সম্পর্ক থাকলে এভাবে কেউ কাউকে একা রেখে চলে যাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারে না। কিন্তু মামুনুল সেটাই করেছেন। এরপর ধরা পড়ে যাওয়ার পর বিয়ের সম্পর্কের কাহিনী সাজিয়েছেন, এবং সেখানেও চিত্রনাট্যে নানা অসঙ্গতি।
মামুনুলের এই প্রমোদভ্রমণে বিপত্তি ঘটেছে সত্য কিন্তু এর সঙ্গে এও সত্য ১৭টি তাজা প্রাণের ‘নাই’ হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি আনন্দভ্রমণে শহর ছেড়েছিলেন। অথচ এই মামুনুলের জন্যে একশ্রেণির উগ্র মতাদর্শের হাজার-হাজার লোক তাদের প্রাণ বলিদান দেওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কীভাবে পারলেন এটা?
জান্নাত আরা ঝরনা নামীয় নারীর সঙ্গে মামুনুল হকের সম্পর্কের বিষয়টি নানা তথ্য-উপাত্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তবু সম্পর্ককে সত্য বলে দাবি করলেও তিনি আদতে হেফাজতে ইসলামসহ হাজার-হাজার অনুসারীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এই বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও তার সংগঠন সেই মিথ্যা সম্পর্ককে ‘শুদ্ধ’ বলে নিজেদের বৈঠকে রায় দিয়েছে। বেকায়দায় পড়া মামুনুলকে উদ্ধারে হেফাজতে ইসলাম এগিয়ে এলেও সেই সম্পর্ককে পারিবারিক স্বীকৃতির নিয়ে যেতে কোনো ভূমিকা পালন করেনি। এই দ্বিচারিতা ধর্মের নামে সংঘটিত হলেও ধর্মের নামে তারাই আবার অন্যদের জন্যে অন্য সিদ্ধান্ত দিয়ে আসছে। এখানে ধর্মীয় শিক্ষার চাইতে ধর্মীয় নেতার ভাবমূর্তি ও তাকে উদ্ধারে ধর্ম ব্যবহৃত হয়েছে।
মামুনুলদের ব্যাখ্যামতে পরনারী-পরস্ত্রীসঙ্গ পাপ। এই পাপের শাস্তি তারা দিতে চায় কথিত শরিয়া আইনে। এই শরিয়া আইন চালু করতে তারা নানা দাবি নানা সময়ে উপস্থাপন করেছে, এখনও করে যাচ্ছে। কিন্তু নিজেদের বেলায় তারা সুবিধামত ব্যাখ্যায় উদ্ধার পেতে মরিয়া। এটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তবে এই অপরাধে অপরাধী এখানে একা মামুনুল নন, এখানে তাকে এই অবৈধ সম্পর্কে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করে অপরাধী হয়ে ওঠেছেন দেশের আলেমসমাজ। এই আলেমসমাজের একদল মামুনুলের সরাসরি পক্ষ নিয়েছেন, আরেকদল চুপ থেকে মামুনুলের পাপ কিংবা অপরাধের দায় নিজেদের ঘাড়েও নিচ্ছেন।
মামুনুলের নারীসঙ্গ বিষয়টিকে মুক্তচিন্তায় অপরাধ বলে বিবেচনা করা হোক বা না হোক, এটা একজন ধর্মীয় নেতার নৈতিক অবক্ষয়কে স্মারক হিসেবে সামনে এসেছে। পৃথিবীর মুক্ত-সম্পর্কের দেশগুলোতে ব্যক্তির বহুগামি রূপকে বড় অপরাধ হিসেবে না দেখলেও পাবলিক ফিগারদের ক্ষেত্রে সেই দৃষ্টিভঙ্গি অন্য। পাবলিক ফিগারদের এইধরনের অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে অনেককে পদ হারাতে হয়েছে, শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। এখানে সাধারণ মানুষ আর পাবলিক ফিগারের মধ্যে পার্থক্য যেখানে তারা অন্যদের জন্যে অনুকরণীয় হয়ে থাকেন। রিসোর্ট-কাণ্ডে মামুনুলের ভূমিকা তার নৈতিক অবক্ষয়ের স্মারক হওয়ার পাশাপাশি এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নিঃসন্দেহে। তার ওপর একটা মিথ্যা সম্পর্কে সত্য বলে দাবি করতে গিয়ে তিনি নিজেসহ তার পরিবার, তার সংগঠন, দেশের আলেমসমাজ, তার অনুসারীদের একের পর এক মিথ্যাচারের আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
এই মিথ্যাচার, এই শঠতা, এই প্রতারণা, এই অনৈতিক সম্পর্ক, অন্যের সংসার ভেঙে নিজেই সেই সংসারে ঢুকে যাওয়া আর যাই হোক কোনো সৎ ধর্মীয় নেতার চারিত্রিক রূপ হতে পারে না। যে নারীকে বিয়ে করেছেন বলে ধরা পড়ে যাওয়ার পর দাবি করছেন সেই নারীর সঙ্গে প্রতারণার পাশাপাশি লাখ লাখ অনুসারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। প্রতারণা করেছেন ধর্মের সঙ্গে। এখন আলেমসমাজ যেভাবে মামুনুল হকের মিথ্যাচার ও প্রতারণার দায় নিতে চলেছেন তাতে করে সাধারণ মানুষের কাছে দেশের আলেমসমাজের ভাবমূর্তিই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আলেমরা কেন স্রেফ নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বার্থে ধর্মের নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন এই প্রশ্ন ওঠেছে।
মামুনুল হক, বাবুনগরীরা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে আসছেন। তাদের উস্কানিতে হাজার-হাজার ধর্মান্ধ লোক প্রভাবিত হচ্ছে। নারী বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বাড়ছে। মামুনুল হকের উস্কানিতে গত মার্চেই সুনামগঞ্জের শাল্লায় ৮৮ হিন্দু ধর্মাবলম্বীর বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে, মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। তাদের উস্কানিতে আগুনে পুড়েছে ওস্তাদ আলাউদ্দীন সঙ্গীতাঙ্গন, পুড়েছে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, ভাঙচুর হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে, মানুষ মারাও গেছে। ১৭ প্রাণের এই অপচয়ের এক সপ্তাহ যায়নি মামুনুল হকের প্রমোদভ্রমণে যেতে। স্বজনহারাদের বেদনা, ১৭ জনের রক্তের দাগও শুকায়নি এখনও অথচ মামুনুল হক কী করলেন তাদের সঙ্গে! অথচ এই মামুনুলের উস্কানিতেই বিভ্রান্ত হয়ে সহিংসতায় জড়িয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে। এই এত প্রাণের কি কোন মূল্য নাই মামুনুল হকদের কাছে?
দেশের প্রতি, নিজের অনুসারীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন মামুনুল হক। এখানে তার নৈতিক স্খলন হয়েছে। তিনি সাম্প্রদায়িক উস্কানির হোতা। তার শাস্তির জন্যে শরিয়া আইনের দরকার নাই, তার শাস্তির দাবি উপস্থাপনে ধর্মীয় বিধানাবলীও উপস্থাপনের প্রয়োজন নাই। কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা মামুনুল হকের শাস্তি হতে পারে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িকতা আর বিদ্বেষ সৃষ্টির কারণেই।
 চ্যানেল আই অনলাইন এর সৌজন্যে :
Share.

Leave A Reply