হেফাজেত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক হাটহাজারী আসলেও প্রশানের অনুরোধের পাশাপাশি ছাত্রলীগের চাপের মূখে মাহফিলে বক্তব্য না দিয়েই ঢাকায় ফিরে গেছেন। দিনভর টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে সকালে সড়কপথে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আসেন তিনি। তবে দুপুর থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে ছাত্রলীগ যুবলীগের শত শত নেতাকর্মীর অবস্থানে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ফলে বিকেলের দিকে যে পথে এসেছিলেন সেই পথেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বির্তকিত বক্তব্য দেওয়া মামুনুল হক।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী পৌরসভা সদরের পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘তাফসীরুল কুরআন মাহফিল-২০২০’ এ তথ্য জানান। একই তথ্য জানিয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা সকালে আয়োজক কমিটির সাথে বৈঠক করে অনুরোধ করেছিলাম, যাতে মামুনুল হককে বক্তা হিসেবে না রেখে অন্য কোনও আলেমকে রাখেন। পরে তারা আমাদের সেই অনুরোধ রেখেছেন বলে মনে হচ্ছে। কেননা, মাহফিলে সন্ধ্যায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব জানিয়েছেন, মামুনুল হক সাহেব বক্তব্য রাখবেন না। তাকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
মাহফিলের প্রধান অতিথি হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ‘আমরা শান্তি চাই। আমরা কোনও সংঘাত চাই না। আমাদের আন্দোলন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে। আজকের মাহফিলে মামুনুল হক সাহেব প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। উনি আসলেও প্রশাসনের অনুরোধে আমরা তাকে মাহফিলে না এনে ঢাকায় ফেরত পাঠিয়েছি। যখন একটি কথা উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে, তাকে যাতে মাহফিলে না রাখা হয়। আমরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলাম, তাকে মাহফিলে আনব না। তবে একথা আমরা বলার আগেই উনার (মামুনুল হক) কাছে এ খবর চলে গেছে। তাই তিনি নিজেও মাহফিলে বক্তব্য রাখতে আগ্রহী নয়। আমরাও যেমন আগ্রহী নয়, এরকম পরিস্থিতিতে মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার জন্য উনিও আগ্রহী নয়। উনি একজন সম্মানী মানুষ, তার সম্মান নিয়ে কেউ কিছু করুক তা আমরা চাই না।’
হেফাজতের ঘনিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চট্টগ্রামের যুবলীগ ছাত্রলীগের আন্দোলন আর প্রশাসনের চাপে বিকেল ৪টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে জুনায়েদ বাবুনগরীর নিজ গাড়িতে করে ফটিকছড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয় মামুনুল হককে। সেখান থেকে তিনি মিরসরাই হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যান।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে মামুনুল হক বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে কঠোর সমালোচনা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। সমাবেশ থেকে মামুনুল হককে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি হাটহাজারীতে উত্তর জেলা ছাত্রলীগও তাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে ছিল দিনভর।
এদিকে মাহফিলকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকাল থেকে হাটহাজারী পৌরসভা ও এর আশপাশের এলাকায় পুলিশের ২৫টি টিম সহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে ছিল সিএমপি।
হাটহাজারী পৌরসভা সদরের পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত ২৫ নভেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী ‘তাফসীরুল কুরআন মাহফিল-২০২০’ আয়োজন করেছে ‘আল আমিন সংস্থা’ নামের একটি সংগঠন। প্রতি বছর শীতে সংস্থাটি এই মাহফিলের আয়োজন করে। সংস্থার ব্যানারে হলেও আয়োজকরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মী ও স্থানীয় আলেমরা এই সংগঠনে রয়েছে।
মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা এবং হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) এই মাহফিলে প্রধান দুই বক্তার একজন হলেন প্রয়াত শাইখুল হাদিস আল্লামা আজীজুল হক’র পুত্র হেফাজতের নবগঠিত কমিটির যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। অন্যজন হলেন মাওলানা জুনাইদ আল-হাবীব। শুক্রবার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর উপস্থিত ছিলেন। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ওই মাহফিলের কার্যক্রম চলছিল বিদ্যালয়ের মাঠে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক সদ্য ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিবের পদ পেয়েছেন। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানী ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে ধোলাইপাড়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবি তোলেন মামুনুল হক। তার ওই বক্তব্যের পর এখন পর্যন্ত সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ লক্ষ করা যায়নি। তবে জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছেন।