বাজারে সংকট, গুদামে মজুদ লাখ লাখ লিটার ভোজ্যতেল

0

সম্প্রতি ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম লিটারে ৩৮ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। এরপরও নিত্যপণ্যটির সংকট কাটছে না বাজারে। একটি চক্র কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোজ্যতেলের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এজন্য দেশের নানা এলাকায় গুদামে অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে লাখ লাখ লিটার তেল। মঙ্গলবার (১০ মে) রাজশাহী, চট্টগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে প্রায় পৌনে দুই লাখ লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর।  

রাজশাহীতে গুদামে ৯৪ হাজার লিটার ভোজ্যতেল

রাজশাহীতে ২০ হাজার লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই আরও ৯৪ হাজার লিটার ভোজ্যতেলের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারের কয়েকটি গুদাম ও দোকানে অভিযান চালিয়ে এসব জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (১০ মে) বিকেলে শুরু হওয়া অভিযান রাত পর্যন্ত চলছে বলে জানা গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই এলাকার চারটি গুদাম থেকে ৯৩ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করেছে পুলিশ।

রাজশাহী জেলা পুলিশ ও পুঠিয়া থানা পুলিশের যৌথ অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম।
kushtia oilকুষ্টিয়ায় গোডাউনে মিলল ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন

কুষ্টিয়ায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানে শহরের একটি গোডাউনে মজুদ পাওয়া গেছে ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল।

মঙ্গলবার (১০ মে) সকাল থেকে দিনব্যাপী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয় এ অভিযান চালায়। এ সময় সোয়াবিন তেল মজুদ করে রাখা ও বেশি দামে বিক্রির অপরাধে তিন দোকানিকে জরিমানা করা হয়।

অধিদফতরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডলের নেতৃত্বে শহরের বড় বাজার ও পৌর বাজার এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, বড় বাজার এলাকায় মেসার্স ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি গোডাউনে ৪০ হাজার লিটার সোয়াবিন তেলের মজুদ পাওয়া যায়। বিপুল পরিমাণ এই তেল ক্রেতা সাধারণের কাছে বিক্রি না করে মজুদ করে রাখা হয়েছিল।

এ সময় তেল বিক্রি না করে মজুদ করে রাখার অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর শহরের পৌর বাজারে বোতলের মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে সোয়াবিন তেল বিক্রয় করার অপরাধে মা স্টোরকে এক হাজার টাকা এবং বোতলের তেল ঢেলে তা অধিক মূল্যে বিক্রয় করার অপরাধে সবুজ সাথী স্টোরকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পাবনায় ১৮ হাজার লিটার তেল জব্দ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় অবৈধভাবে মজুদ করে রাখা ১৮ হাজার লিটার সোয়াবিন তেল জব্দ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

মঙ্গলবার (১০ মে) বেলা ১১টার দিকে শহরের নূরমহল্লা মাতৃমন্দিরের সামনে শ্যামল স্টোর থেকে এসব তেল জব্দ করা হয়।

মজুদকৃত তেলের মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার লিটার খোলা (লুজ) ভোজ্য সোয়াবিন তেল, এক হাজার ২৪৪ লিটার বোতলজাত তেল ও সাত হাজার লিটার সরিষার রয়েছে। তেলগুলো বেশি দামের আশায় প্রায় একমাস আগে দোকানের গোডাউনে মজুদ করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে পাবনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক জহিুরুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমার দোকানের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে এসব তেল জব্ধ করা হয়েছে। অবৈধভাবে তেল মজুদ করায় দোকানের মালিক মালিক শ্যামল দত্ত পালকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি মজুদ করা সমুদয় সয়াবিন তেল দ্রুত ন্যায্য মূল্যে বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
rajshahi oilসয়াবিন তেল মজুদ, প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সয়াবিন তেল মজুদ, উচ্চ মূল্য নেওয়া, সয়াবিনের সঙ্গে অন্য পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য করার অভিযোগে তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় মজুদ করা প্রায় এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল নায্যমূল্যে খোলাবাজে বিক্রি করা হয়।

মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পাচলিয়া বাজারে এই অভিযান চালানো হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সয়াবিন তেল মজুদ রাখা হয়েছে এমন অভিযোগে মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাচলিয়া বাজারের সততা স্টোরে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় মজুদ করা অবস্থায় প্রায় ৫ হাজার লিটার খোলা সয়াবিন তেল ও প্রায় ১ হাজার লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। এসময় তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও খোলা বাজারে জব্দ করা সয়াবিন তেল বিক্রি করা হয়। একই বাজারের সাহা স্টোর ও সিয়াম স্টোরে সয়াবিন তেল মজুদ ও তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করার অভিযোগে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সয়াবিনকাণ্ডে তিন বিক্রেতাকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা

রাজশাহীতে পৃথক অভিযোগে তিন বিক্রেতাকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। নগরীতে সয়াবিন বিক্রিতে মূল্য কারসাজি ও অবৈধভাবে মজুদের অভিযোগে এ জরিমানা করা হয়।

মঙ্গলবার (১০ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের এ জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ এসব অভিযান পরিচালনা করেন।
pabna oilবিষয়টি নিশ্চিত করে হাসান আল মারুফ বলেন, সকালে নগরীর বোয়ালিয়া ও রাজপাড়া থানাধীন এলাকার দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় বোতলজাত সয়াবিন তেল মজুদ রেখেও বিক্রি না করায় মেসার্স হুমায়ুন স্টোরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করায় একই এলাকার মেসার্স পাপ্পু অ্যান্ড ব্রাদার্সকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়াও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করায় বহরমপুর মোড় এলাকার মেসার্স নুরুন্নবি ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করেন। জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

বরিশালে অভিযানে ১৬৫ টাকায় তেল বিক্রি

বরিশালে ভোজ্য তেলের বোতলের গায়ে লেখা পূর্বের রেটে সয়াবিন তেল বিক্রি করতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

মঙ্গলবার (১০ মে) বেলা ১২টায় নগরীর সাগরদী বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাজার মনিটরিং টিম এ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযান পরিচালনাকারী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. শাহ শোয়াইব মিয়া বলেন, সাগরদী বাজারে সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে ১৬৫ টাকা লেখা থাকলেও তা ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সাগরদী বাজারের কবির স্টোরে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু বোতল সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। দোকানের মালিক মো. কবির হোসেন ওই তেল ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছিল। অথচ ওইসব তেলের বোতলের গায়ে পূর্বের ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা লিটার দর লেখা ছিল।

পরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর তাৎক্ষণিক পূর্বের দরে তেল বিক্রি করতে বাধ্য করে দোকানিকে। পূর্বের দামে তেল কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। আর এই ধরনের অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানান শাহ শোয়াইব মিয়া।

অভিযান পরিচালনাকারী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. শাহ শোয়াইব মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, অভিযান চলাকালে বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়। উপস্থিত নাগরিকদের মাঝে ভোক্তা অধিকার আইন সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়। এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জনস্বার্থ রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
manikganj oil মানিকগঞ্জে তেল বিক্রয়ে কারসাজি, ব্যবসায়ীকে জরিমানা

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় সয়াবিন তেলের অধিক মুনাফার কারণে বোতল খুলে খোলাবাজারে বিক্রি করার দায়ে অসাধু ৫ ব্যবসায়ীকে ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন জেলার ভোক্তা অধিকার সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল।

মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে ঘিওর বাজারে জোলার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক অবৈধ ৫ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেন।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘিওর বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেল বোতল খুলে বেশি টাকার লোভে খোলাবাজারে বিক্রয় করে আসছেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে, ফারুক অ্যান্ড সন্স স্টোরে কোন বোতলজাত তেল না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির গুদামে অভিযান চালানো হয়। সেখানে দুই ও পাঁচ লিটারের শত শত খোলা বোতল দেখতে পায়। প্রতিষ্ঠানটির মালিকে অভিযান কারি দল খোলা বোতলের কথা জিজ্ঞাসাবাদ করলে বলেন, বোতলের তেল ঢেলে খোলা তেল হিসেবে বিক্রিয় করলে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভে বিক্রয় করতে পারি। এ সময় প্রতিষ্ঠানের মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর একই অপরাধের দায়ে বাজারের হানিফ স্টোরকে ২ হাজার টাকা, অসীম স্টোরকে ৩ হাজার টাকা, সাহা ব্রাদার্সক স্টোরকে ৫ হাজার টাকা, এবং সুমন স্টোরকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বলেন, বাজারে সয়াবিন তেলে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করতে এবং তেলে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত দামে নিত্যপ্রয়োজণীয় পণ্য বিক্রি যাতে না করে এবং পণ্যের মূল্যতালিকা প্রদর্শন করতে বাজারের ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

Share.

Leave A Reply