ভেঙে টুকরো হচ্ছে হেফাজত : ননীর পুতুল’ ৪’শ কাউন্সিলরের নিয়ন্ত্রণ ১০ জনের হাতে

0

হেফাজতে ইসলামের রোববারের কাউন্সিল বন্ধ করা না হলে সদ্যপ্রয়াত আমির আল্লামা শফীর দুই হাজার খলিফাকে নিয়ে নতুন আরেকটি হেফাজতে ইসলাম গঠন করা হবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে শফীর অনুসারীরা দাবি করেছেন, হেফাজতে ইসলামের নতুন কাউন্সিল ডাকার বৈধতা নেই।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে (কাউন্সিল) ঘিরে ৎপর হয়ে উঠেছে সংগঠনটির আমৃত্যু আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিরোধিরা অন্যের ঘাড়ে মাথা রেখে পুরো হেফাজতকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় বিএনপিজামায়েতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ওই চক্রটি তাদের রোডম্যাপেই হেফাজতের কাউন্সিলর নির্ধারণসহ সবই হচ্ছে কে ডেলিগেট হবে আর হবে না সেটাও নির্ধারণ করছে ওই চক্র এমনকি প্রাথমিকভাবে চারশ জনের কাউন্সিলর সম্মেলনে দাওয়াত পেলেও হেফাজতের নেতৃত্ব নির্ধারণ করবে কিন্তু দশ জনের উপদেষ্টা কমিটিই তাদের বাতলে দেওয়া নেতৃত্বই নির্বাচিত করবেন চারশ কাউন্সিলরহেফাজতে ইসলাম ও একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।  

রোববার (১৫ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল আহ্বান করেছেন বর্তমান মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা। হেফাজতের এই সম্মেলনে অনুমিতভাবেই জুনায়েদ বাবুনগরী নতুন আমির ও নূর হোসাইন কাশেমী মহাসচিব হচ্ছেন বলে মনে করছেন দুই পক্ষের নেতারাই। এছাড়া অন্য কয়েকটি শীর্ষ পদেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এতে মামুনুল হক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হারুন ইজহার সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেতে পারেন।

অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমৃত্যু আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীদের বের করে দেওয়ার সব রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে সম্মেলন আয়োজনের সাথে জড়িতরা।হেফাজতের প্রচার সম্পাদক ও আহমদ শফীর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহীসহ আহমদ শফীর ঘনিষ্টজনদের সম্মেলনে দাওয়াতও দেয়া হয়নি।এখানে সব কিছু হেফাজত থেকে পদত্যাগী ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ও হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীই নিয়ন্ত্রণ করছেন।এই দুই মামা ভাগিনার পেছনে আছেন হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির ও হাটহাজারী মেখল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া।তারা দুই জনই মূলত হেফাজতের পুরো কাউন্সিলকে ঘিরে নিজেদের একটি বলয় তৈরি করেছেন এবং পুরো সম্মেলন নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘দাওয়াত দেওয়ার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদের যাদের দাওয়াত দিতে হবে নিশ্চয় উনারা তাদের দাওয়াত দিবেন।’

এদিকে এখনও ‘ঐক্যবদ্ধ হেফাজত’ ধরে রাখতে আলাপ আলোচনা করে সমঝোতার চেষ্টা করছেন শফীর অনুসারীরা। তবে এই মুহূর্তে কর্তৃত্বে থাকা বাবুনগরীর সমর্থকরা এই ধরনের সমঝোতার বার্তাকে আমলে নিচ্ছেন না।এমনকি এই সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ায় বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ওয়াক্কাস, আব্দুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানকে ‘সরকারের দালাল’ বলে নাজেহালও করেছে বাবুনগরীর অনুসারীরা এমনটাই দাবি আল্লামা শফীর অনুসারীদের।

হেফাজতের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক আ ন ম আহমদ উল্লাহ বলেন, ‘যিনি এই কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন, তিনি দুই বছর আগে পদত্যাগ করেছেন। এরপর আর তিনি হেফাজতে ফেরার ঘোষণাও দেননি। তিনি কিভাবে সম্মেলন ডাকেন? তাছাড়া এই সম্মেলনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কেউ কিছু জানে না।’

হেফাজতের মূল শূরা কমিটিকে বাদ দিয়ে মনগড়া নতুন একটা শূরা কমিটি দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে হেফাজতকে জামায়াতীকরণের অপচেষ্টা চলছে এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হেফাজতের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য বড় হুজুর বেঁচে থাকতেই ২০১৫ সালে ২০০ জনের একটি শূরা কমিটি করে দিয়েছেন। আজকে সেই শূরার নামগন্ধও নাই। যে ১৮ জনকে দিয়ে শুরা গঠন করা হয়েছে, তাদের ৩-৪ জন ছাড়া কেউ হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই। এমনকি হেফাজতের প্রাথমিক সদস্যও নয় এমন লোককেও এই শূরায় রাখা হয়েছে।’

এই সম্মেলনকে ‘অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক’ বলে উল্লেখ করে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাইনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘এটি কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদিত সম্মেলন নয়। মূলত জামায়াতি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গুটিকয়েক নেতা এই ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন জুনায়েদ বাবুনগরী, নূর হোসাইন কাশেমী, মামুনুল হক, মুফতি হারুন ইজহার এসব কিছুর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মূল নেতা হিসেবে বাবুনগরীকে এসবের দায় নিতে হবে।’

মাওলানা রুহি বলেন, ‘মাওলানা বাবুনগরী ক্ষমতালোভী। ক্ষমতার জন্য যা করছে এখলাস দ্বীনদারীর গন্ধও নাই। তারা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী হয়ে রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তারা জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। আমরা তাদের কাছে লোক পাঠিয়েছি। তারা সাড়া দেয়নি। আমরা চেষ্টা করছি, না হলে সময়ের প্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’

এই দ্বন্দ্বে কোনো পক্ষেই নেই এমন কয়েকজন আলেমও ঐক্যের চেষ্টা করে নাজেহাল হয়েছেন জানিয়ে হেফাজত নেতা আ ন ম আহমদ উল্লাহ বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে সম্মেলন করে হেফাজতকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য সম্মানিত অনেক আলেম চেষ্টা করেছেন। বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ওয়াক্কাস, আব্দুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান সাহেব এই বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে তাদের সরকারের দালাল বলে নাজেহাল করেছেন মামুনুল হক, মুফতি হারুন ইজহার, নূর হোসাইন কাশেমীরা।’

‘তবু আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। যদি দেখি তারা তাদের মত করে নেতৃত্ব নির্বাচন করে ফেলছে তখন আমরা আল্লামা শাহ আহমদ শফির ২০০০ খলিফাকে নিয়ে নতুন হেফাজতের কার্যক্রম ঘোষণা করবো’বলেন আহমদ উল্লাহ।

এদিকে প্রথমে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন এমন কথা বললেও সমালোচনার মুখে সেই বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী নন সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। যারা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ডাক দিয়েছেন বলে লিখেছেন, তারা মনগড়া লিখেছেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মহাসচিব এই সম্মেলন ডেকেছেন। এতে সারা দেশ থেকে ৫০০ প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। সবার উপস্থিতিতে মুরুব্বিরা নেতা নির্বাচন করবেন।’

জামায়াতি এজেন্ডা বাস্তবায়নে এই সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে শফী অনুসারীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ইসলামাবাদী বলেন, ‘এসব কথা যারা বলেন তারাই (ফয়জুল্লাহ-রুহি) জামায়াতের সাথে ২০ দলে আছেন। জামায়াতের এজেন্ডা উনারাই ভাল জানবেন।’

এদিকে এই মুহূর্তে জামায়াত নয়, ভারতকে নিয়েই বেশি ভাবা দরকার জরুরি এমন মন্তব্য করে মুফতি হারুন ইজহার বলেন, ‘আপনারা এখন জামায়াত নিয়ে কেন কথা বলছেন? এখন কথা বলা দরকার ভারতকে নিয়ে। কথা বলা দরকার দুর্নীতি নিয়ে, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস নিয়ে।’ #

Share.

Leave A Reply