উত্তর কাট্টলী ঘাটের জেলেরা জানান, ইলিশের মৌসুম এখন শেষ পর্যায়ে। ইলিশ আগের মতো ধরা পড়ছে না। নিষেধাজ্ঞার আগে জোয়ার শুরু হলে জেলেরা রুপালি ইলিশ নিয়ে বিভিন্ন ঘাটে ট্রলার ভিড়াত। কিন্তু এখন তার উল্টো চিত্র। ইলিশ ধরা পড়ছে খুবই কম। আগের তুলনায় হিসাব করলে শতকরা ১০ শতাংশ হবে বলে জেলে ও আড়তদাররা জানিয়েছেন। ফলে দামও চড়া। তীরে মাছ বোঝাই ট্রলার ভিড়লেই হামলে পড়েন মাছ ব্যবসায়ীরা। জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে নিয়ে আসেন এখানে। এখান থেকে মাছ বিকিকিনি হয়।রাসমনি ঘাট থেকে মাছ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের হাতে সমুদ্রের তাজা মাছ তুলে দিতে এখান থেকে মাছ সংগ্রহ করেন নগরের মাছ বাজারের খুচরা বিক্রেতারা। ফিশারি ঘাটে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পাইকারি দাম ৬০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। আর এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। অথচ নিষেধাজ্ঞার আগে এই ঘাটে এর অর্ধেক দামে ইলিশ বিক্রি হয়েছিল। ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত ইলিশ ধরার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। বুধবার রাত ১২টার পর তা শেষ হয়। অন্যান্য বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললে ধরা পড়ত ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এ বছর মাছের দেখাই মিলছে না। নদীতে জাল ফেলে খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। একদিকে ঋণের বোঝা, অপরদিকে সংসার চালানোর খরচ। এ সময়ে আশানুরূপ মাছ না পেয়ে চরম হতাশায় জেলেরা। কষ্ট দিন দিন বেড়েই চলছে।
রোববার ফিশারি ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা জাল গুটিয়ে বসে আছেন। কেউ জাল-দড়ি পরিষ্কার করছেন। অনেকেই বাড়ি ফিরছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে এ সময়ে সাগরে থাকত ট্রলারের মিছিল। জাল ফেললেই ধরা পড়ত রুপালি ইলিশ। জেলেদের মুখে থাকত আনন্দের হাসি। এবার উল্টো চিত্র। নদীতে মাছ না পেয়ে অধিকাংশ জেলে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখা গেছে। ইলিশ শিকারের লক্ষ্যে ধার-দেনা করে জাল-দড়ি বানিয়েছিলেন অনেকেই। পরিকল্পনা ছিল মাছ বিক্রি করে ঋণ শোধ করবেন। কিন্তু আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় খরচের টাকাই উঠছে না। ফলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তারা। বলছিলেন, ফিশারি ঘাটের একাধিক জেলে।ঘাটের জেলে আবুল খায়ের যুগান্তরকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগে মণে মণে ইলিশ ধরা পড়েছিল। আর এখন কয়েক কেজি ইলিশও পাচ্ছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকব তা নিয়ে টেনশনে আছি।চট্টগ্রাম নতুন ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী পরিমল নাথ জানান, সাগরে এখন মাছের আকাল। ফিশারি ঘাট মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার বলেন, ইলিশ খুব অল্পই ধরা পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলে পরিবারদের কী হয় কারও জানা নেই। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই আড়তে আসেন মাছ কিনতে। কিন্তু অন্যান্য বছর আড়তে যে মাছ উঠে এবার তার দশ ভাগের এক ভাগও উঠেনি। ফলে দামও চড়া। একদিকে ক্রেতাদের ভিড়, অপরদিকে দাম চড়া হওয়াতে অনেকেই মাছ না কিনে হতাশ হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন