দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ বাড়ার লক্ষণ, কমেছে মৃত্যুহার

0
 স্টাফ করেসপন্ডেন্ট |
 চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। সংক্রমণ বাড়লেও এখনই করোনার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছে বলতে রাজি নন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে সংক্রমণের লাগাম টানতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন তারা।  সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৮১ জনের। যা গত চার মাসের মধ্যে এবং গত ১০ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে ৫ হাজার ৫৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ওই মাসে নমুনা পরীক্ষা করা ৩০ হাজার ৯১২টি। এছাড়া আগস্ট মাসে শনাক্ত হয় ২ হাজার ৬৫২ জন। যা জুলাই মাসের তুলনায় ২ হাজার ৯৩৮ জন কম। এই মাসে (আগস্ট) নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২০ হাজার ৩৪৩টি।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে করোনা শনাক্তের সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৪৩ জন। যা আগস্ট মাসের তুলনায় ৯০৯ জন কম। সেপ্টেম্বর মাসে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৬ হাজার ৪৫৬টি। এই মাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও অক্টোবর মাসে সংক্রমণের হার আবারও ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়। এই মাসে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৫৪ জন, যা সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় ৬১১ জন বেশি।

এছাড়া অক্টোবর মাসে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৬ হাজার ৮৪৫টি। অন্যদিকে চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৫১০ জন। যা গত অক্টোবরের শেষ ১৫ দিনের চেয়ে ১৮০ জন বেশি। নভেম্বর মাসে গত ১৫দিনে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৫০৯টি।

সংক্রমণ ধাপে ধাপে বাড়লেও আশার বিষয়, মৃত্যুর পরিসংখ্যান গ্রাফ অনেকটা নিন্মগামী। প্রথমদিকে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকলেও বর্তমানে কমেছে মৃত্যুহার।

নভেম্বর মাসে গত ১৫ দিনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অক্টোবর মাসে ১১ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ২১ জন, আগস্ট মাসে ৩৭ জন, জুলাই মাসে ৫৮ জন, জুন মাসে ৯৮ জন, মে মাসে ৬৮ জন এবং এপ্রিল মাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন।

সংক্রমণ রুখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও কোনোভাবেই মাস্ক পড়তে বাধ্য করা যাচ্ছে না জনসাধারণকে। ফলে সংক্রমণের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতন না হলে এই মাত্রা আরও বাড়তে পারে।

দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মাসুম, বিআইটিআইডি করোনা ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমদের কাছে জানতে চাওয়া হয়।

তারা বলেন, দ্বিতীয় ধাপ শুরুর বিষয়টি অনেকটা পরিসংখ্যানভিত্তিক। তবে করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে, যা দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ বাড়ার লক্ষণ। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হওয়া জরুরি। মানুষ রোগটিকে স্বাভাবিক রোগ হিসেবে নিয়েছে। অনেকে হেলাফেলা করছে। তাই সংক্রমণ বাড়ছে। দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছে-এখনই তা বলার সময় আসেনি।

নগরের তুলনায় উপজেলাগুলোতে সংক্রমণের পরিমাণ কম হাওয়া পিছনে কি কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্রামের মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। তাই তাদের মধ্যে সংক্রমণ হলেও অতিদ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। তাছাড়া শহরে ঘনবসতি থাকায় মানুষের মধ্যে সংক্রমণটা একটু বেশি, কিন্তু গ্রামের বাড়িগুলো একটু দূরত্বে থাকে। সহজেই দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। তাই হয়তো সংক্রমণটা কম। আবার যারা আক্রান্ত হচ্ছে তারা বিষয়টিকে সাধারণ ফ্লু হিসেবে নিয়ে ঘরে বসে চিকিৎসা গ্রহণ করে ভালো হয়ে যাচ্ছে। সচেতনতার অভাবও রয়েছে। বেশি প্রয়োজন না হলে তারা করোনা টেস্ট করাতে চান না।

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে তা সত্য। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপ বলা যাবে না। শীত মৌসুম শুরু হতে আরও খানিকটা দেরি আছে। শীত শুরু হলে আমরা বুঝতে পারবো সংক্রমণ কেমন বাড়ছে। তাছাড়া করোনায় মৃত্যুহার খুবই কম। এটি একটি ভালো লক্ষণ। তবে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া দরকার।

Share.

Leave A Reply