সাকিবকে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন চমকবাজ পরেশ

0
যে পরেশ পালের আমন্ত্রণে সাকিব আল হাসান কলকাতায় গিয়েছিলেন, তার আদিবাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। মামার বাড়ি খুলনার বাগেরহাটে। পরেশ পালকে নিয়ে বিবিসি বাংলার অমিতাভ ভট্টশালী একটি প্রতিবেদন করেছেন। সেখানে পরেশের ভালো-মন্দ অনেক গুণাগুণ উঠে এসেছে। রাজনীতি হোক বা সামাজিক কাজকর্ম, চমক দেওয়াটাই পরেশের স্বভাব। এই যে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বিতর্ক, সেখানেও চমকই দিতে চেয়েছিল বোধহয় পরেশ।
সাকিবকে নিয়ে ওঠা বিতর্ক প্রসঙ্গে পরেশ অমিতাভকে বলেন, ‘আমি তো কোরবানির ঈদের আগে বাংলাদেশে গেলে জবাই করার গরু কিনতে মুসলমান বন্ধুদের নিয়ে গরুর হাটে যাই। এ আর নতুন কথা কী! আর বাংলাদেশে যেতে আমার দাওয়াত লাগবে নাকি, ওটা তো আমার জন্মভিটা। আমাদের আদি বাড়ি ছিল বরিশাল, আর জন্মেছি মামার বাড়ি বাগেরহাটে।’
ভারত ভাগ হওয়ার এক বছর আগে জন্ম নেওয়া পরেশ পালের পরিবার উদ্বাস্তু হিসেবে জন্মভিটা ছেড়ে ভারতে চলে যান।
সেই থেকেই পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকায় তাদের বসবাস। বেড়ে ওঠা, রাজনীতি-সবকিছুই ওই এলাকা ঘিরেই।
পরে কংগ্রেসি ঘরানার রাজনীতি করলেও একেবারে ছোটবেলা থেকে তিনি বড় হয়েছেন বামপন্থী দল আরএসপি-র নেতা মাখন পালের কাছে।
‘আরএসপি-র মাখন পালকে নিজের বাবার মতো মনে করেন পরেশদা,’ বলছিলেন পরেশের রাজনৈতিক জীবন খুব কাছ থেকে দেখেছেন এমন একজন কলকাতার সিনিয়র সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরী।
তার কথায়, ‘দেশ ভাগের পরে ভারতে চলে আসার পথেই পরেশদার এক বোন হারিয়ে যান। সেই দুঃখ তিনি কোনোদিন ভুলতে পারেননি। সেজন্যই অসহায়, দুস্থ মেয়েদের সাহায্য করার জন্য বহু বছর ধরে তার এলাকায় গণ-বিবাহ আয়োজন করেন।’
‘পরেশই সম্ভবত ভারতে প্রথম গণ-বিবাহের ধারণাটা চালু করেন প্রায় ৪০ বছর আগে। এছাড়া তার আরেকটা বড় উদ্যোগ সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এক মাস ধরে সুভাষ মেলা করা।’
‘আর বছর ১০-১২ ধরে ইলিশ উৎসব করছে ও। এছাড়াও বড় করে কালীপূজো তো করেই,’ বলছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুখেন্দু শেখর রায়।
কাঁকুড়গাছি-বেলেঘাটা এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, ‘পরেশ পালের উদ্যোগে হওয়া ওই বাৎসরিক গণ-বিবাহের ইতিবাচক একটা দিক থাকলেও বেশ কিছু বর-কনেকে দেখা যায় প্রতিবছরই ওই বিবাহ অনুষ্ঠানে বিয়ে করতে। গণ-বিবাহের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর জন্য এটা করা হয় বলে এলাকার ওই বাসিন্দাদের ধারণা।’
‘এলাকার রিকশাচালক, বিধবা নারীদের নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে বিয়ে দেয়া হয়। তাদের সারাদিনের খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক বিয়েই তিন থেকে চার দিনের বেশি টেকে না বলেই আমরা জানি। উনি সবসময়েই চমক দিতে পছন্দ করেন,’ বলছিলেন বেলেঘাটা এলাকার এক বাসিন্দা, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে দিতে রাজি হলেন না।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুখেন্দু শেখর রায়ও বলছিলেন, ‘রাজনীতি হোক বা সামাজিক কাজকর্ম, চমক দেওয়াটাই পরেশের স্বভাব। এই যে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বিতর্ক, সেখানেও চমকই দিতে চেয়েছিল বোধহয়। অন্য অনেক পূজা কমিটি ভারতের ক্রিকেটারদের দিয়ে উদ্বোধন করায়, ওর মাথায় কাজ করেছে আমি ভারতের ক্রিকেটার কেন আনব, বাংলাদেশের স্টার ক্রিকেটার নিয়ে আসব। ও এরকমই।’
তবে এলাকায় কান পাতলে শোনা যায় ওই সব ‘ইতিবাচক’ সামাজিক কাজের জন্য বেলেঘাটা-কাঁকুড়গাছি অঞ্চলের ধনী বাসিন্দাদের কাছ থেকে বড় রকমের চাঁদা আদায় করেন তিনি।
তবে তিনি যে দল-ধর্ম নির্বিশেষে এলাকাবাসীর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, সেটা এলাকার অনেক বাসিন্দাই মনে করেন।
পরেশ পাল বলছিলেন, ‘আমি ওই সব হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ বুঝি না, মানি না। হাতের আঙুল কাটলে সবারই তো লাল রক্ত বেরবে।’
‘পরেশদার একটা টিম আছে যারা ২৪ ঘণ্টাই এলাকায় তৎপর থাকে। যেকোনো মানুষ বিপদে পড়লে, তারা এগিয়ে যায়। এ ব্যাপারে খুব সংগঠিত পরেশদা। এটা কিছুটা সম্ভবত শিখেছে প্রয়াত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অজিত পাঁজার কাছ থেকে। তিনিও যেমন নিজের নির্বাচনী এলাকার খুঁটিনাটি তথ্য রাখতেন, পরেশদার টিমটাও সেরকম। বেলেঘাটা অঞ্চলে তার এমনই প্রভাব, যে একবার তো স্বয়ং মমতা ব্যানার্জিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি,’ জানালেন জয়ন্ত চৌধুরী।
Share.

Leave A Reply