‘তোর বিষ কমাচ্ছি’ বলেই স্ত্রী ইয়াসমিনের যোনি ও পায়ুপথসহ পুরো নিম্নাঙ্গে পেট্টোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী রাফেল। শরীর ভর্তি দাউ দাউ করে জ্বলন্ত লেলিহান শিখা। ৭ বছরের সংসার এবং ৪ বছর বয়সী সন্তানের দোহায় দিয়ে অসহায় ইয়াসমিন স্বামীর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও রাফেলের তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। উপায়ন্তর না দেখে নিজেকে রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে ঘর থেকে বের হবার চেষ্টা করেন ইয়াসমিন। কিন্তু হায়, এখানেও স্বামীর বাঁধা। পুড়ে মরতে হবে, বের হওয়া চলবে না।
পুড়তে পুড়তে এক পর্যায়ে শরীরে লেপ্টে থাকা পেট্টোল ফুরিয়ে গেলে ইয়াসমিনের শরীরের আগুনও নিভে যায়। কিন্তু নেভেনি রাফেলের নিষ্ঠুরতার আগুন। এবার নতুন খেলায় মেতে উঠে সে। স্ত্রীর পোড়া শরীর থেকে কাবাব করা মুরগীর মতো করে চামড়া তুলে নিতে থাকেন দুই হাতের ঘষায়। একেক ঘর্ষনের সাথে খসে পড়তে থাকে পুড়ে যাওয়া চামড়া, সাথে ইয়াসমিনের মরণ আর্তচিৎকার। কিন্তু তাতেও রাফেলের নিষ্ঠুরতায় কোন হের ফের ঘটেনা। উল্টো মেয়ের যন্ত্রণার খানিকটা ভাগ বাবা-মাকেও দিতে ফোন করেন ইয়াসমিনের বাপের বাড়িতে। তখন শনিবার দিবাতগ রাত পৌনে ১ টা। গভীর রাতে মেয়ে জামাইয়ের ফোন পেয়ে উৎকন্ঠিত শাশুড়ি ফোন তুলতেই তাকে সোজা জানিয়ে দেন, ‘তোর মেয়েকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি, এসে নিয়ে যা’। রাফেলের পাশবিকতা-হিংস্রতার এখানেই শেষ নয়। পৈশাচিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করে আর্তচিৎকার করতে থাকা স্ত্রীকে রেখেই পাশের কক্ষে গিয়ে দিব্যি ঘুমিয়েও পড়েন তিনি। নির্মমতা ও বর্বর এই ঘটনাটি ঘটেছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড গোয়ালপুরা গ্রামের সন্ধীপপাড়া এলাকায়।
শনিবার দিবাগত রাতে যৗতুকের দাবী মেঠাতে নাপারার জেরে এই ঘটনা ঘটায় বলে ইয়াছমিনের পরিবার জানিয়েছে। ইয়াছমিন আকতার (৩০) নামের এই গৃহবধুকে শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সকালে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সকালে স্থানীয়রা পাষন্ড স্বামী মো. রাফেল (৩৫) কে আটক করে পুলিশের হাত তুলে দিয়েছেন বলে জানান। এঘটনায় শুক্রবার রাতে থানায় মামলা হয়েছে। রাফেল পূর্ব কোদালার সন্ধীপপাড়ার মৃত মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে। তাদের সংসারে ৪ বছরের একটা ছেলে সন্তান রয়েছে। ইয়াছমিন আকতার উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকার হারুনুর রশিদের মেয়ে। প্রায় সাতবছর আগে তাদের বিয়ে হয়।
গৃহবধু ইয়াছমিনের চাচা চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউপি সদস্য আবদুল মালেক জানান, যৌতুকের দাবীতে ইয়াছমিনকে প্রায়ই নির্যাতন করতো স্বামী রাফেল। শনিবার দিবাগত রাতে স্বাভাবিক ঘুমাতে যান তারা। তাদের মাঝে এদিনও পারিবারিক কলহে কথা কাটাকাটি হয়। গভীররাতে স্বামী রাফেল পেট্টোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তার ভাতিজীর শরীরে বুকের নিচের অংশ ঝলসে গেছে, তাকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, প্রেপ্তারের বিষয়ে স্বামি রাফেলের কোন বিকার নেই। নেই নিজের কৃতকর্মের জন্য ন্যুনতম অনুতাপবোধও। উল্টো খোশ মেজাজের সঙ্গে জানালেন, সে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেতে চান। থানার হাজতে বসে কাউকে এত নির্বিকারভাবে কথা বলতে আমি কোনদিন শুনিনি। ঘটনার পর আমি নিজে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গেছি, গৃহবধুর শরিরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এঘটনায় পুলিশ ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করা হবে।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাহাবুব মিল্কি বলেন, আগুনে ঝলসে দেয়া গৃহবধুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার স্বামীকে পুলিশ আটক করেছে। এঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। #