সদ্য ঘোষিত হেফাজতের নতুন কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর অনুসারীরা ‘ধীরে চলো’ নীতি গ্রহণ করেছেন। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে চান না তারা; বরং বুঝে–শুনে এগোতে চান। সে কারণেই পূর্ব ঘোষিত ‘পাল্টা’ সম্মেলন— যেটা শনিবার (২১ নভেম্বর) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, সেটি তারা স্থগিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেফজাতে ইসলামের সাবেক কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের অনুসারী রয়েছে। তাদের সবাইকে একত্রিত করে সম্মেলন করতে চাই। হুট করে সম্মেলন আয়োজন করলে সেটি ওদের (বাবুনগরী ও তার অনুসারী) মতো পকেট কমিটি হবে। আমরা ধীরে–সুস্থে এগোতে চাই।’
‘তাছাড়া আমাদের ইচ্ছা আছে বড় পরিসরে সম্মেলন করার। জাতীয় প্রেসক্লাব, মহানগর নাট্যমঞ্চ অথবা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন বুকিং পেলে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করব। সারাদেশে হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসার লাখ, লাখ আলেম–ওলামা রয়েছেন। তাদের নিয়ে সম্মেলন করতে গেলে ছোট্ট পরিসরে হবে না’— বলেন হেফজতের নতুন কমিটিতে স্থান না পাওয়া মাওলানা রুহী।
এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় সম্মেলনে জুনায়েদ বাবুনগরীকে প্রধান করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে হেফাজতে ইসলাম। ১৫১ সদস্যের মধ্যে ১২০ জনকে ওই দিন মনোনয়ন দেওয়া হয়। বাকি ৩১ জনকে পরে যুক্ত করবে নতুন কমিটি।
ওই কমিটিতে পদ পাননি আগের কমিটির প্রচার সম্পাদক ও হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, যুগ্ম–মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা সলিমুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত আমিনী।
এছাড়া সম্মেলনে দাওয়াত না দিলেও কৌশলগত কারণে আগের কমিটির নায়েবে আমীর মুফতি ওয়াক্কাছকে নতুন কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। সম্মেলনে ডাকা হয়নি এবং কোনো পদে রাখা হয়নি বেফাকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাওলানা মাহদুদুল হাসান ও সাবেক কমিটির এক নম্বর সদস্য ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীমসহ অসংখ্য বর্ষীয়ান আলেম–ওলামাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হেফাজতের নতুন কমিটি নিয়ে আনাস মাদানী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা সলিমুল্লাহ, আবুল হাসনাত আমিনী, মুফতি ওয়াক্কাছদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও পরিবেশ–পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে না থাকায় এই মুহূর্তে বিকল্প কমিটি বা পাল্টা কমিটির কথা ভাবছেন না তারা। বরং সারাদেশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা প্রয়াত আহমদ শফী এবং তার ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারীদের এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হেফাজতের নতুন কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া নেতারা।
জানতে চাইলে হেফাজতের সাবেক কমিটির নায়েবে আমীর মুফতি মোহম্মদ ওয়াক্কাছ বলেন, ‘হেফাজতের সম্মেলনে আমাকে ডাকা হয়নি। আমি যাইওনি। তারপরও আপাতত বিকল্প কমিটি বা পাল্টা সম্মেলনের কথা ভাবছি না। আগে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করব, তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।’
সূত্রগুলো বলছে, বিরোধীপক্ষ বা বাদপড়া দলের পাল্লা যাতে ভারি হয়ে না যায়, সে কারণেই মুফতি ওয়াক্কাছকে উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি হাসনাত আমিনী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ’র নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট থেকে চার/পাঁচজনকে নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘এটা ওদের কৌশল। আমাদের সঙ্গে ভিড়তে পারে— এ আশঙ্কা থেকে ওরা মুফতি ওক্কাছসহ ইসলামী ঐক্যজোটের কয়েকজনকে নতুন কমিটিতে রেখেছে। তবে মুফতি ওয়াক্কাছ ছাড়া বাকিরা হেফাজতের সক্রিয় নেতা নন। তাদের ভালো কোনো পদও দেওয়া হয়নি।’
অবশ্য নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাদী বলেন, ‘যোগ্যতা, আনুগত্য ও সক্রিয় ভূমিকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। যারা বাদ পড়েছেন, তারা তাদের কর্মফলের কারণেই বাদ পড়েছেন।’
সারাবাংলা