ডিএসসিসির মেয়র তাপসের নাম বেচে বিপাকে কাউন্সিলর ফরিদ

0
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে বিপাকে পড়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ ওরফে রতনের কাছে এরই মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছেন মেয়র। কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে ডিএসসিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে মেয়র স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রতনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের।
মেয়র তাপস পদে বসে সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার কথা বলছেন। তার নির্দেশে নগর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন দুটি মার্কেটে নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
প্রথমে অভিযান চালানো হয় ফুলবাড়িয়া মার্কেটে। সেখানে প্রায় এক হাজার দোকান থেকে দোকানিদের উচ্ছেদ করা হয়। এরপর অভিযান শুরু হয় সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে। সেখানে ছয়শরও বেশি দোকান ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করে উচ্ছেদকারীরা। যদিও দোকানিদের আবেদনে হাইকোর্টের আদেশে আপাতত বন্ধ রয়েছে অভিযান।
এই অভিযানের সময় ব্যবসায়ীরা দাবি করতে থাকেন, তাদের পজেশন অবৈধ নয়। তারা টাকা দিয়ে দোকান বৈধ করেছেন। টাকা দেয়ার রশিদও দেখিয়েছেন বহুজন। জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনে নিয়মিত ভাড়াও পরিশোধ করা হয়েছে।
সেখানে বাধে বিপত্তি। বহু রশিদে সই আছে, কিন্তু সিল নেই। আবার সিটি করপোরেশনের রসিদ থাকলেও নথিতে নাম নেই। ফলে করপোরেশনের তহবিলে কোনো টাকা জমা পড়েনি।
প্রশ্ন উঠে, তবে টাকা কে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা তখন জানান, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের নাম ভাঙিয়ে নিয়েছেন কেউ কেউ; কেউ আবার টাকা নিয়েছেন বর্তমান মেয়র তাপসের নামে।
দোকানিরা জানান, দোকান বৈধ করার আশ্বাস দিয়ে টাকা তুলেছেন যুবলীগ নেতা শাহাবুদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা মনোয়ার হোসেন ও কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন। একেকটি দোকানের জন্য পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে বলেও দাবি দোকানিদের।
তার নামে টাকা তুলেছেন বলে দোকানিদের বক্তব্য কানে গেছে মেয়র তাপসের। ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি।
কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে ডিএসসিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুসারে এটা অসদাচারণ।
এমন কর্মকাণ্ডের কারণে ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। জবাব দিতে হবে সাত কর্মদিবসের মধ্যে।
তবে কাউন্সিলর ফরিদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ববলেন, ‘আমি জীবনে কোনোদিন ওই মার্কেটের (সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট) ভেতর ঢুকি নাই। টাকা নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। বরং মেয়র সাহেবকে (ফজলে নূর তাপস) আমি বার বার ওখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে বলেছি।’
ফরিদ উদ্দিন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত। তিনি ২০ নং ওয়ার্ডের টানা দুইবারের কাউন্সিলর।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় গ্রেফতার হওয়া বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীম, যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সঙ্গে ফরিদের সুসম্পর্ক ছিল।
নগর ভবন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে ফরিদের বিরুদ্ধে, যদিও এসব তিনি অস্বীকার করেছেন।
দেহরক্ষী নিয়ে চলা এই কাউন্সিলর প্রথম দফায় নির্বাচিত হওয়ার পর ডিএসসিসির দুই কর্মকর্তাকে মারধর করেও আলোচনায় এসেছিলেন।
Share.

Leave A Reply