এক চুমুক চায়ে দিনের শুরু

0

বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাতে এক কাপ গরম চা নিয়ে খেতে খেতে সকালের সূর্যের মিষ্টি রোদ পোহানো… কার না ভালো লাগে, তাই না? অথবা ধরুন, খুব ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, বসে আছেন চুপটি করে, সাথে বাজছে রবীন্দ্রসংগীত আর হাতে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম চা… মনটাই ভালো হয়ে যায়। বিষণ্ণতায়, আড্ডায়, শত কাজের ব্যস্ততায়, কাজে-অকাজে, মোটকথা, সারাটাদিন জুড়ে চা-টা কিন্তু খাওয়া হয় কমবেশি সবারই।

চা বলতে শুধু সেই দুধ-চা কিন্তু নয়। আরেক ধরনের চা আছে যাকে বলে হারবাল টি বা ভেষজ চা, যা আমরা সবাই জানি। ভেষজ চা অনেক প্রকারের হয় এবং এদের অনেক বেনেফিট আছে। এই চা-গুলো বানিয়ে চুমুকে মজায় বা মুখ কুচকে তো নিমিষেই শেষ করি। কিন্তু এদের গুণাবলী আমরা কয়জনই বা জানি! তাই আজ কয়েক ধরনের  হারবাল টি-এর বেনেফিটস নিয়ে কথা বলবো।

তুলসী চা

তুলসী একটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজ গাছ। তুলসী চা দুশ্চিন্তা, ধকল, ডায়াবেটিস ও হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে উপযোগী।এছাড়া সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর, মাথা ব্যথা, হৃদরোগ, অনিদ্রা, পেট খারাপ ইত্যাদি ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণেও তুলসী চা কিন্তু অতুলনীয়।

আদা চা

আদার গুণাবলী সম্পর্কে আমাদের সকলেরই কমবেশি ধারণা আছে। আদার চা রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বহন করে যা প্রদাহ, বমিভাব, আলসার, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। তাছাড়া ডিসমেনরিয়া বা মাসিকের ব্যথা কমাতে এবং ওজন কমাতেও আদা চা ওষুধের মত কাজ করে। আদা চা ব্রেইন সেল-লস কমিয়ে আলজেইমারস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

লেবু চা

লেবু চা-কে ‘ডিটক্সিফায়ার’-ও বলা হয়ে থাকে। কারণ এটি আমাদের বডি সিস্টেম থেকে সেই টক্সিনগুলোকে দূর করে যেগুলো বিভিন্ন রোগ ও সঙ্ক্রমণের কারণ। এটি আমাদের রোগপ্রতিরোধ সিস্টেমকে আরও কার্যকর করে এবং ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি ইত্যাদি কমায়। মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, কম জীবনীশক্তি, ক্লান্তিভাব, অবসাদ ইত্যাদি দূর করে। কারডিওভাসকুলার রোগগুলোকেও প্রতিরোধ করে। লেবু চায়ে আছে ভিটামিন সি ও অ্যাস্ট্রিনজেন্ট যা ব্রণ, বিভিন্ন চর্মরোগ এবং বাড়তি ওজন কমাতে সহায়তা করে।

গ্রীন টি

গ্রীন টি তৈরি হয় ‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস’ নামক একটি গুল্ম থেকে। এতে থাকে ‘ক্যাটেকিন’ নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা ভিটামিন সি ও ই থেকেও শক্তিশালী। তাই গ্রীন টি হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে, কোলেস্টেরল কমায়, শরীরের টক্সিন দূর করে, ওজন কমায়, স্কিনের তারুণ্য বজায় রাখে, ব্রণ দূর করে, শরীরের রোগপ্রতিরোধক সিস্টেমকে উন্নত করে এবং লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে রক্ষা করে।

পুদিনার চা

পুদিনার চায়ের গুণের অভাব নেই। পুদিনার চা বদহজম প্রতিহত করে, মুখের দুর্গন্ধ, ক্লান্তি ও বমিভাব দূর করে, বুকের ভেতর রক্ত জমাট বাধা ও শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত  সমস্যা প্রতিরোধ করে, মাইগ্রেন এর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাবর্ধক, ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

হলুদের চা

প্রতিদিন সকালে এককাপ হলুদের চা কিন্তু অনেক উপকারী। এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, বাতের ব্যথা কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, কোলেস্টেরল কমায়, ওজন কমায়, আলজেইমারস রোগ প্রতিহত করতে সহায়তা করে, লিভারের রোগ প্রতিহত করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়।

দারুচিনির চা

দারুচিনির চা রক্তে চিনি কমায়, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  হৃদরোগ ও স্কিনের ক্ষত প্রতিরোধ করে এবং শরীর ও মস্তিষ্কের বার্ধক্য কমায় ও নিয়ন্ত্রণ করে, এর ‘সিন্যামালডিহাইড’ ক্যান্সারের টিউমার দমন করে ডিএনএ-এর গঠনকে রক্ষা করে, দাঁতকে ক্যাভিটি থেকে রক্ষা করে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, ওজন ও ব্রণ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

জুঁই ফুলের চা

ক্লান্তি দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি চা। এছাড়াও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, ঠাণ্ডা-কাশি, কোলেস্টেরল ও ওজন কমায়, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।

তাই যারা চা খুব পছন্দ করেন, এই হারবাল চাগুলো কিন্তু খেয়ে দেখতে পারেন। স্বাস্থ্যকর যে কোনোকিছুই ভালো, হয়ত স্বাদটা অনেক সময় ভালো নাও লাগতে পারে, কিন্তু অভ্যাস হয়ে গেলে তখন কিন্তু আর সমস্যা হয় না। আর স্বাদ বাড়াতে মধুতো আছেই, কিন্তু তাও অল্পপরিমাণে মেশান। ভালো কিছু পেতে হলে, একটু কষ্ট কিন্তু করতেই হয়। তবে কেন নয়?

Share.

Leave A Reply