ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্ত ত্যাগের, কেউ ফাটল ধরাতে পারবে না: ভারতীয় হাইকমিশনার

0
ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব শুধু ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক রেখায় সীমাবদ্ধ নয়, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্ত এবং ত্যাগের। কেউ এ সম্পর্কের ফাটল ধরাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর স্রোতের মতো বহমান থাকবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ পৃথিবীর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। উন্নয়ন, অগ্রগতিতে বাংলাদেশ নিজেই একটি সমৃদ্ধশালী দেশ। এদেশের মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন স্মরণ করবে। মহান এ নায়কের চেতনায় সবাইকে উজ্জীবিত হতে হবে। কারণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে এদেশের ইতিহাস রচিত হয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।’
হাইকমিশনার দোরাইস্বামী আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। পাকবাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাহসী সংগ্রাম করে যাচ্ছিল বাংলাদেশের জনগণ। ভারত ন্যায়ের পক্ষে নীতিগত অবস্থান নিয়েছিল সেদিন।’
দোরাইস্বামী ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার বাবা ফাইটার পাইলট ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সেদিনগুলো আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। মুক্তিযুদ্ধ করে বাঙালি বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম ও জয়ের এ অভূতপূর্ব ইতিহাসে অংশগ্রহণ করে ভারত গর্বিত হয়েছিল। এভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন রচিত হয়।’
এর আগে ভারতীয় হাইকমিশনার চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাদদেশে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। কোনোভাবেই এ বন্ধন ছিন্ন হওয়ার নয়। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের এক কোটি শরণার্থীকে ৯ মাস ভরণপোষণ করেছে। তারা শুধু রাজনৈতিকভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেনি, সামরিকভাবেও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। গেরিলাযুদ্ধ করে একটি দেশ স্বাধীন করা যায় না। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মিত্রবাহিনী পাকহানাদার বাহিনীর সাথে পুরোদমে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এজন্যই মাত্র ১৩ দিনের মাথায় মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য জেলা পরিষদের প্রশাসক, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এসব স্তম্ভ নির্মাণের জন্য নিদিষ্ট একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে। কিন্তু তারা শুধু পরিল্পনাই করছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে না।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সাংসদ দিদারুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল।
এসময় চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনারের সহধর্মিণী সংগীতা দোরাইস্বামী, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের সেকেন্ড অফিসার দীপ্তি আলংঘাট, চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, জেলা পরিষদ সদস্যবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
Share.

Leave A Reply