করোনার টিকা চট্টগ্রামে

0

অবশেষে বহু প্রতীক্ষার করোনার টিকা পৌঁছেছে চট্টগ্রামে। গতকাল রোববার সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দকৃত টিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পৌঁছায়। বড় আকারের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (ফ্রিজার) ভ্যানে করে এসব টিকা পৌঁছে দেয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৮ কার্টন (৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ) টিকা বুঝে পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এসব টিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে রাখা হয়েছে। সকালে টিকা হস্তান্তরকালে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ ও নিয়ন্ত্রণ) ডা. নুরুল হায়দার ও ভ্যাকসিন গ্রহণ সংক্রান্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বেক্সিমকো ফার্মার কর্মকর্তারা এসব টিকা হস্তান্তর করেন।এর আগে ২৪ জানুয়ারি জেলা ভিত্তিক করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) বরাদ্দ দিয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কার্টন হিসেবে বরাদ্দ দেয়া তালিকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে-প্রতি কার্টনে ১২০০ ভায়াল ভ্যাকসিন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ভ্যাকসিনের প্রতি ভায়ালে ১০টি ডোজ রয়েছে। সে হিসেবে প্রতি কার্টনে ১২ হাজার ডোজ (১২০০ ভায়াল) ভ্যাকসিন থাকছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় দেখা যায়- চট্টগ্রামের জন্য ৩৮ কার্টন ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে অতিরিক্ত আরো ৪ কার্টনসহ মোট বরাদ্দ উল্লেখ করা হয়েছে ৪২ কার্টন। ৪২ কার্টনে ৫০ হাজার ৪০০ ভায়াল হিসেবে মোট ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে চট্টগ্রাম। যদিও প্রথম দফায় বরাদ্দের ৩৮ কার্টন (৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ) ভ্যাকসিনই পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের মাঝে এই টিকা প্রদান করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দেশে এরইমধ্যে করোনার টিকাদান (ভ্যাকসিন) শুরু হয়েছে। শুরুতেই রাজধানী ঢাকায় এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। আর ঢাকার বাইরে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান শুরুর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামেও আনুষ্ঠানিক ভাবে করোনার টিকাদান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনের কথা জানিয়েছেন তারা।
যেভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে টিকা : ৩৮ কার্টনে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ করোনার টিকা রাখা হয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে। এই স্টোরে ১ লাখ ডোজ টিকা রাখার সক্ষমতা রয়েছে। তবে ভায়াল হিসেবে রাখায় সক্ষমতার অতিরিক্ত টিকা সংরক্ষণে অসুবিধা হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- প্রতি কার্টনে ১২০০ ভায়াল টিকা রয়েছে। সে হিসেবে ৩৮ কার্টনে মোট ৪৫ হাজার ৬০০ ভায়াল টিকা এসেছে। সম্পূর্ণ না খুলে ভায়াল হিসেবেই টিকাগুলো ইপিআই স্টোরে রাখা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন। তিনি বলেন-প্রতি ভায়ালে ১০টি করে ডোজ রয়েছে। সবমিলিয়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ পাওয়া গেছে। ডোজ আকারে রাখলে স্টোরে সব ডোজ রাখতে সমস্যায় পড়তে হতো। তাই আমরা ভায়াল হিসেবে সংরক্ষণ করছি। সবমিলিয়ে ৪৫ হাজার ৬০০ ভায়াল হওয়ায় সংরক্ষণে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা বলেও জানান তিনি। স্টোরে বর্তমানে পুলিশ পাহারা রয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।

নগরে টিকাদানে প্রস্তুতি : টিকাদানে চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন এলাকার সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরইমধ্যে প্রাথমিকভাবে টিকাদান কেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- নগরের ১৫টি কেন্দ্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আর এসব কেন্দ্রে প্রথমে ৪২টি টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকার কথা জানালেও আরো ২৩টি টিমকে টিকাদানে যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। ১৫টি কেন্দ্রে সবমিলিয়ে ৬৫টি টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
টিকাদানে ১৫ কেন্দ্র : চট্টগ্রাম মহানগরে করোনার টিকাদানে নির্ধারণ করা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২. চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ৩. চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতাল ৪. চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল ৫. সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল ৬. চট্টগ্রাম নৌ-বাহিনী হাসপাতাল ৭. চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী হাসপাতাল ৮. চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল ৯. চসিক বন্দরটিলা হাসপাতাল ১০. চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল ১১. চসিক ছাপা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল ১২. ইউএসটিসি হাসপাতাল ১৩. সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৪. মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ১৫. মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। মহানগরের এই ১৫টি কেন্দ্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।
টিকাদানে বাড়লো টিম : করোনার টিকাদানে মহানগরের কেন্দ্রগুলোতে প্রথমে ৪২টি টিম নিয়োজিত থাকার কথা জানালেও এ সংক্রান্ত টিমের সংখ্যা বাড়ানোর কথা জানিয়েছে চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটি। এ তথ্য নিশ্চিত করে কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী আজাদীকে বলেন- টিকাদানে অতিরিক্ত ২৩টি টিম গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ২৩টিসহ মোট ৬৫টি টিম কেন্দ্রগুলোতে টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে।
টিকাদানকারী হিসেবে ২ জন মিড ওয়াইফ, স্টাফ নার্স বা সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৪ জন স্বেচ্ছা সেবকের সমন্বয়ে প্রতিটি টিমে মোট ৬ জন সদস্য থাকবেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে ১০টি করে টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে। এ দুটি কেন্দ্রে প্রথম দফায় ৪টি করে টিম নির্ধারণ করা হয়। চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতালে আগের নির্ধারিত ৪টি টিম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগের নির্ধারিত ৮টি টিম নিয়োজিত থাকবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে ১টি করে টিম কাজ করবে।
এর বাইরে নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩টি টিম কাজ করবে। আর চট্টগ্রাম নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী হাসপাতাল, ইউএসটিসি হাসপাতাল, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে ২টি করে টিম নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল, চসিক বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতাল ও চসিক ছাপা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল কেন্দ্রে ৬টি করে টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে।
টিমগুলোকে টিকাদানের জন্য এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী আজাদীকে বলেন- কয়েকদিনের মধ্যেই এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করে এ সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা পর্যায়ে টিকাদান : উপজেলায় প্রাথমিক ভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙগুলোতে করোনার টিকা দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙগুলোতে ২টি করে টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে। টিকাদানে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শনিবার থেকে জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর ১ ফেব্রুয়ারি (আজ) থেকে উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

Share.

Leave A Reply