স্টাফ রিপোর্টার ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাঙালি একটি নিরস্ত্র জাতি ছিল, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের একটি ভাষণেই নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বললেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।
৬ মার্চ, শনিবার দুপুরে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এমন একটি ভাষণ ছিল, যার লাঠি আছে সে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল, যার ঘরে দা আছে, লাইসেন্স করা বন্দুক আছে তা নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিল। যে ভাষণ আজও যে কেউ শুনলে যেভাবে উদ্দীপ্ত হয়, গায়ের লোম যেভাবে খাড়া হয়ে যায়, এমন কোন নেতার ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে প্রকৃতপক্ষে কেউ দেননি।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মো. শামসুল হক। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো, আতাউর রহমান, সহ সভাপতি অধ্যাপক মো. মঈন উদ্দিন, এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মঈন উদ্দিন রাশেদ, জসিম উদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ, স্বজন কুমার তালুকদার, আবদুল্লাহ আল বাকের ভুইঁয়া, উত্তর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো এমন আবেদনময় ও উদ্দীপ্ত করার ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ দেননি। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর কোন নোট ছিল না, তিনি একনাগাড়ে বলে গেছেন। পৃথিবীতে অনেক ভাষণ আছে অনেক অর্থবহ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর এ ভাষণে একটা নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীকে সশস্ত্র জনবাহিনীতে রূপান্তর করে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, চতুর শেখ মুজিব প্রকৃতঅর্থে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য তাকে অভিযুক্তও করা যাচ্ছে না। এমনভাবে বঙ্গবন্ধু বললেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
এর মাধ্যমে সেদিন রিপোর্টার ও তরুণদের উদ্দীপ্ত করেছিল এই ভাষণ। এখনো এই ভাষণ শুনলে মানুষ থমকে দাঁড়ায়, এজন্য বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ অসাধারণ ও অনন্য বিধায় জাতিসংঘের বিশ^ ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর অপপ্রচার চালানো হয় জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ দলীয় নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের প্রচার বেশি করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বড়বড় স্লোগান ও ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়ার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে অপপ্রচারগুলোর বিরুদ্ধে সুপ্রচার চালানো, উন্নয়ন ও অর্জনের প্রচার করা।
সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রপচারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো তুলে ধরা। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের ভালো প্রচার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার কর্মীদেরও মূল্যায়ন করবো।
বিএনপি ৭ই মার্চ পালন করবে ঘোষণা দেয়ায় তাদের অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, এতদিন পরে তাদের বোধোদয় হলো। মির্জা ফখরুল সাহেব এটিও বলেছেন ৭ই মার্চ ইতিহাস, এই ইতিহাসকে আমাদের স্বীকার করতে হবে। আমি ফখরুল সাহেবদের বলবো বাকি যে ইতিহাস বিকৃতি করেছিলেন, সেটাও ভুল স্বীকার করে বাকি ইতিহাসগুলোও স্বীকার করে নেন। তাহলে জাতি আপনাদেরকে সাধুবাদ দিবে।
তিনি বলেন, বিএনপির এখন নানা ধরণের মিছিল আছে : দৌড় মিছিল, চোরাগোপ্তা মিছিল, হঠাৎ মিছিল। গতকাল বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব রিজভি আহমেদ নাকি একটি চোরাগোপ্তা মশাল মিছিল করেছেন। তাদের বলবো এভাবে চোরাগোপ্তা মিছিল ও মানুষের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা করে লাভ হবে না। সত্যিকার অর্থে জনগণের কাছে যদি যেতে চান তাহলে ইতিহাসকে মেনে নিন, যেভাবে ৭ই মার্চকে মেনে নিয়েছেন। এতদিনের অপরাজনীতির জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান।
বিএনপি ও তাদের মিত্ররা মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর জন্য মায়াকান্না করছেন, তাঁর মৃত্যুতে আমি নিজেও ব্যথিত। কিন্তু মুশতাক আহমেদ কেন গ্রেফতার হয়েছেন প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি করোনা মহামারি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের পোস্ট দিচ্ছিলেন। একটি পেজ থেকে নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছিলেন, সেই কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জামিন কেন পাননি, সেটি কোর্ট বলতে পারবে, এই এখতিয়ার কোর্টের। তাঁর মৃত্যুটা স্বাভাবিক মৃত্যু, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এভাবে ছেলেধরা নিয়েও গুজব ছড়ানো হয়েছিল।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে যখন কোন অর্জন হয়, আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলাম, তখন একটি পক্ষ লেগে গেল অন্য বিষয় নিয়ে মাঠ গরম করার জন্য। অথচ এটি নিয়ে একটি অভিনন্দন তাদের মুখ থেকে আসেনি। এটি তাদের একপেশে ও চিন্তার দৈন্যতা। দেশের অর্জন যে তাদের চোখে পড়ে না, কানে যায় না সেটিরই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি উন্নত রাষ্ট্র রচনা করার জন্য। সেই স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজকে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের আগেই বাংলাদেশ নাম লিখাতো উন্নত দেশের কাতারে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাঁই সাইঁ করে উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর বছরে জাতিসংঘ ফাইনাল রিকমেন্ডেশন দিয়েছে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। এটি আমাদের দেশের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবচে’ বড় অর্জন।