ঘর পেয়ে ঘরে ঘরে আনন্দ

0

আব্বাস হোসাইন আফতাব :
সাত বছর আগে সবিতা দাশের ভিটেবাড়ি কর্ণফুলী নদীর ভাঙ্গনে তলিয়ে গেছে।
স্বামী নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। জায়গা কিনে ঘর
করবেন এমন সামর্থ্যও তাঁদের নেই। সবিতা দাশের এখন নিজের জায়গা ও ঘর
হয়েছে। মাথাগোঁজার ঠাঁই হয়েছে তাঁর।
সবিতার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ ঘাটচেক গ্রামে।
উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের বহলপুর গ্রামে ৩০ পরিবারের জন্য নতুন নির্মিত
আশ্রয় পল্লীতে ঘর পেয়েছেন তিনি।
সবিতার মতো রাঙ্গুনিয়ায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ৫০ পরিবারকে আধা পাকা ঘর দিয়েছে
সরকার। এর আগে ঘর পেয়েছেন ১১৫ পরিবার। সব মিলিয়ে মুজিব বর্ষের উপহার
হিসেবে রাঙ্গুনিয়ায় ১৬৫ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার জমিসহ ঘর পান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (২০ জুন) বেলা ১২ টার দিকে ঘরের আনুষ্ঠানিক
উদ্বোধন করেছেন।
সকাল ১০ টা । অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। তবুও বর্ণিল সাজের কমতি নেই বেতাগীর
বহলপুর গ্রামে। এই আশ্রয়কেন্দ্রে ঘর পেয়েছে ৩০ টি ভূমিহীন ও দরিদ্র
পরিবার। তাঁদের হাতে জমির দলিল ও ঘরের কাগজপত্র তুলে দেওয়া হয় আজ। বেলা ১২ টার পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও
কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। এ সময় তাঁকে প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান। একপর্যায়ে
প্রধানমন্ত্রী এক উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলেন।
জাহানারা বেগম নামে এক উপকারভোগী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘ আঁত্তে কিছু ন আছিল, অনে আঁরে ঘর দিইয়ুন, এই রহম ঘর পাইয়্মু চিন্তাও ন গরি, আঁরা খুব খুশি অই, অনেয়ু সুখী অন এই দোয়া গরি “(আমার কিছু ছিলনা, আপনি আমাকে ঘর দিয়েছেন, এই রকম ঘর পাব চিন্তাও করিনি, আমরা খুব খুশি হয়েছি। আপনি সুখী হোন এই দোয়া করি )।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ আশ্রয়ণের মাধ্যমে গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। নিজের জীবনটা নিজে গড়তে পারে সেজন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা সে লক্ষেই আমার কাজ করছি। ”
নতুন নির্মিত ঘরগুলোর উদ্বোধন উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশেপাশে সাজানো হয়েছে। ঘরের দরজার সামনে লাগানো হয়েছে নামফলক। ঘর পেয়ে ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের
বন্যা । অনুষ্ঠান শেষ হলে নতুন কাপড় পরে তাঁর ঘরের সামনে বসে ছিলেন আনোয়ারা বেগম।
নতুন ঘর পেয়ে খুশি তিনি। উৎফুল্ল কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ বদ্দিন পর নিজোর ঘর
অইয়্যি, খুব খুশি লার, পরিবার লইয়েরে ভালাভাবে তাইত পাইয্যুম(অনেকদিন পর
নিজের ঘর হয়েছে, খুব খুশি লাগছে , পরিবার নিয়ে ভালোভাবে থাকত পারব)। ”
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম অনুষ্ঠান শেষ করার পর রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি তাঁর বক্তব্যে বলেন, উপকারভোগীরা কেউ কখনো ভাবেনি এই ধরনের ঘর পাবেন। শুধু ঘর পাওয়া নয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সাথে কথাও বলেছেন। স্বপ্নকেও হার মানিয়েছে তাঁদের প্রাপ্তি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর
রহমান বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পে ছিন্নমূল মানুষের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনে
ভিটেবাড়ি হারা পরিবারও রয়েছে। গৃহায়নের পর ওই এলাকায় পাকা রাস্তা তৈরি,
বিদ্যুৎ সংযোগ ও গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে।

Share.

Leave A Reply