ফের ‘নাটকীয়তা’ : কালুঘাট সেতু পরিদর্শনে আসলেননা বুয়েট পরামর্শক দল

0

‘হচ্ছে, হবে’- এ আশ্বাসেই কাটছে বছরের পর পর। এভাবে নানা জটিলতায় বার বার পিছিয়ে গেছে কালুরঘাটে বহুল প্রত্যাশিত নতুন সেতুর কাজ। অন্যদিকে নতুন সেতু না হলে জরাজীর্ণ বর্তমান সেতু দিয়েই চট্টগ্রামসহ সারাদেশ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ট্রেন যাবে দোহাজারী-রামু- কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের কাছাকাছি ঘুমধুম। যা পর্যটনখাতে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। 

কিন্তু শতবর্ষী কালুঘাট সেতু একদমই নড়বড়ে। এ জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে কীভাবে ট্রেন চলাচল করবে তা জানতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)  দ্বারস্থ হয়েছিল রেলওয়ে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেতুর বর্তমান অবস্থায় কীভাবে ট্রেন ঘুমধুম যাবে তার হিসাব মেলাতে শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে পরিদর্শনের কথা ছিল বুয়েটের পরামর্শক দলের। কিন্তু  ঠিক শেষ মুহূর্তে বুয়েটের পরামর্শক দল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে এ মুহূর্তে কালুরঘাট সেতু পরিদর্শনে আসতে পারছেন না তারা। তবে জরাজীর্ণ সেতু পরিদর্শনে বুয়েটের পরামর্শক দলটি কবে আসবে- নতুন শিডিউলও ঠিক হয়নি।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের নির্ভরশীল একটি সূত্র বলছে, ঠিক শেষ মুহূর্তে পরিদর্শনে না আসার ব্যাপারটি জানানো হয় বুয়েটের পরামর্শক দলের পক্ষ থেকে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েই শুক্রবারের সফর বাতিল করেছেন বুয়েটের পরামর্শক দলটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আহসান জাবির বলেন, ‘উনারা (বুয়েটের পরামর্শক দল) শিডিউল বাতিল করেছে। কাল (বৃহস্পতিবার) আসার কথা ছিল আজ শুক্রবার ভিজিটের কথা ছিল। পরে কবে আসবে সেটা জানানো হয়নি।’

এর আগে চলতি বছরের মে মাসে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানানো হয়েছিল, সেতুর বর্তমান অবস্থায় কীভাবে ট্রেন ঘুমধুম যাবে তা জানতে পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে রেলওয়ে। পরে জরাজীর্ণ পুরানো সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে বুয়েটের পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরানো কালুরঘাট সেতু  ১২ টন পর্যন্ত লোড নেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তার সর্বোচ্চ লোড ১২ থেকে ১৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। যেখানে মিটারগেজ ট্রেনে থাকবে ধীরগতি। পুরানো এ সেতুতে ব্রডগেজ ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। এর উপর আবার পুরানো সেতুতে বারবার জোড়াতালি পড়েছে। ফলে ১২ টন লোড নেওয়ার যে সক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে তা নিয়েও সংশয় আছে। তাছাড়া এ সেতুর উপর দিয়ে দিনভর ভারী যান চলাচল করছে। যার ফলে পুরানো সেতুটির দুর্বলতা বাড়ছে। অন্যদিকে ২০২২ সালের মধ্যেই কর্ণফুলী নদী পার হয়ে কক্সাবাজার যাবে ট্রেন। সব মিলিয়ে এই পুরান সেতুকেই ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত করাই রেলওয়ের প্রধান কাজ।

অন্যদিকে দোহাজারী থেকে ঘুমধুম প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, এ পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে ৬২ শতাংশ। করোনা ডামাডোলের মধ্যে কাজের কিছুটা ধীরগতি থাকলেও ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার অংশের শতভাগ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান।

এর আগে জরাজীর্ণ সেতুর বেহালদশা থেকে মুক্তি দিতে ২০১৮ সালে রেল কর্তৃপক্ষ ৭ দশমিক ২ মিটার উচ্চতার আরেকটি নতুন রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।  কিন্তু তখনই প্রস্তাবিত সেতুটির উচ্চতা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) আপত্তি তুললে জটিলতা দেখা দেয়। পরে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সমাধান আসে। সিদ্ধান্ত হয় ১২.২ মিটারেই নির্মাণ হবে কালুরঘাট সেতু।

বিআইডব্লিওটিএ বলছে, এতে করে কর্ণফুলীর যে অংশে নতুন সেতু নির্মিত হবে, সেখানে নেভিগেশন চ্যানেল ঠিক থাকবে এবং ঝড়ের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য কর্ণফুলী নদীতে অবস্থান করা জাহাজগুলো সহজেই চলাচল করতে পারবে।

কিন্তু নতুন উচ্চতায় সেতুর নকশা প্রণয়ন, বাজেট, জমি অধিগ্রহণসহ নানা কর্মযজ্ঞ পেরিয়ে কালুরঘাট নতুন সেতুর কাজ শুরু এবং যা পুরোদমে শেষ হতে আরও ৫-৭ বছরের বেশি সময় লাগবে। তার জন্য চট্টগ্রাম তথা সারাদেশের সাথে কক্সবাজার রেল যোগাযোগ স্থাপনে এখন রেলওয়ের চিন্তায় কালুরঘাট পুরান সেতুটি। এগিয়ে চলা চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত প্রায় ১৮৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার আগেই কালুরঘাট সেতু দিয়ে কীভাবে ট্রেন চলাচল করা যাবে তার উপায় খুঁজছে রেলওয়ে।

Share.

Leave A Reply