অপহরণের ৬৩ ঘণ্টা পর গহীন পাহাড় থেকে মুক্তি পেলেন যুবক

0

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা থেকে অপহরণের ৬৩ ঘণ্টা পর  নুরুল আলমকে (৩৬) ছেড়ে দিয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের এলাকার গহীন পাহাড়ের অপহরণকারীদের আস্তানা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এরপর নুরুল আলমকে হেফাজতে নেয় চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই রিপোর্ট লেখার সময় ভুক্তভোগী নুরুল আলম চন্দ্রঘোনা থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন।

পুলিশের নানামুখী তৎপরতায় নুরুলকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পদুয়া এলাকার দাগী সন্ত্রাসী একাধিক ডাকাতি, অপহরণ ও অস্ত্র মামলার আসামি মো. এমদাদ এ ঘটনার মূল হোতা। পদুয়ার ৫ নং ওয়ার্ডের জয়নগর গ্রামের আব্দুল নবীর ছেলে এমদাদের দলে একাধিক পাহাড়ি সন্ত্রাসীও আছে।

এই ব্যাপারে চন্দ্রঘোনা থানার ওসি (তদন্ত) ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পুলিশের নানামুখী তৎপরতার কারণে নুরুলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা পাশের রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পদুয়া এলাকার দাগী সন্ত্রাসী এমদাদকে এ ঘটনার নেপথ্য নায়ক বলে সন্দেহ করি। তাকে আমরা গত দুইদিন পর্যবেক্ষণ করি।

‘এরপর পদুয়ায় তার বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। বাদিপক্ষের লোকজনও শুরু থেকে সন্ত্রাসী এমদাদকে সন্দেহ করে আসছিল। মামলার এজাহারেও তার উল্লেখ আছে। নুরুলকে ছেড়ে দিতে এমদাদের পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে চাপ দিতে থাকে বাদিপক্ষ। একপর্যায়ে নুরুল আলমকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অপহরণকারী এই দাগী সন্ত্রাসীর সহযোগীরা।’ বলেন ওসি ইসতিয়াক।

এর আগে গত শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ১০ থেকে ১২ জন সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী চন্দ্রঘোনা থানার বাঙ্গালহালি ধলিয়া মুসলিম পাড়ার ‘মিম কৃষিজীবী খামারে’ ঢুকে নুরুল আলমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
নুরুল আলমকে দ্রুত উদ্ধারের সহায়তা চাইতে আজ সোমবার সকাল দশটার দিকে তারা র‌্যাব-৭ এর হাটহাজারী কার্যালয়ে যান ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা।

জানা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুরুল আলমের মুঠোফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কল করে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসীরা। সোমবার ভোর পাঁচটার দিকেও অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিকটিমের মুঠোফোন থেকে তার পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপণ না দিলে নুরুল আলমকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছিল তারা।

অপহরণের শিকার মো. নুরুল আলমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত ফয়েজ আহমদ। তারা তিন ভাই, তিন বোন। নুরুল আলমের সংসারে আছে স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তান।

অপহরণের ঘটনায় নুরুল আলমের ভাই মো. কুতুব উদ্দিন গত রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২জন পাহাড়ি সন্ত্রাসীকে আসামি করে চন্দ্রঘোনা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, অপহৃত নুরুল আলম (৩৬) চন্দ্রঘোনা থানাধীন বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ধলিয়া মুসলিম পাড়া গ্রামে ‘মিম কৃষিজীবী খামারে বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে দেখাশুনা করেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর বেলা ২টা থেকে খামারে অবস্থান করছিলেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী খামারে ঢুকে নুরুল আলমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

ঘটনাটি ১২ সেপ্টেম্বর ভোর পাঁচটার দিকে বাদীকে জানান ভুক্তভোগীর সাথে থাকা খামারের কেয়ারটেকার সাইফুল ও নুরুল আলমের ভাগিনা আবদুল আওয়াল। ১২ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ভুক্তভোগীর মুঠোফোন থেকে বাদীর বড়ভাই কাতার প্রবাসী মো. নুর মোহাম্মদের মুঠোফোনে কল করা হয়। এসময় নুরুল আলম তার বড়ভাইকে জানান যে, তাকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাকে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে এসেছে। সন্ত্রাসীরা তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করছে।

Share.

Leave A Reply