আব্বাস হোসাইন আফতাব :
এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে মুহাম্মদ মোজাম্মেল। মা-বাবা নেই তাঁর। নেই নিজস্ব কোন ভিটেবাড়ি। থাকেন বড় বোনের ভাড়া বাড়িতে। অদম্য এই ছেলে এবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কলেজে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ কিভাবে চালাবেন সেটাই চিন্তা তাঁর।
মোজাম্মেলের বড় বোন লাকী আক্তার বলেন, ” আমার মা-বাবা দুজনে মারা যাওয়ার পর আমার ভাইকে দেখাশোনা করতে হয়। রাউজান আমার শ্বশুর বাড়ি হলেও থাকার জায়গা না থাকায় রাঙ্গুনিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকি। আমাদের পৈতৃক নিজস্ব কোন জায়গা ও ঘর নেই। আমরা তিন বোন দুই ভাই। অন্য ভাই রিক্সা চালায়। ছোট ভাই মোজাম্মেল এবার এ প্লাস পেয়েছে। এতদিন নিজেরা যতটুকু পেরেছি ততটুকু সহযোগিতা করেছি। সবার সহযোগিতায় মোজাম্মেল
মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোলেও উচ্চ মাধ্যমিকে তাঁর পড়ালেখা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে
। তাঁর স্বপ্ন একজন প্রকৌশলী হবে। কিন্তু আর্থিক দৈন্য দশার কারনে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা সেটা নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে।’
মোজাম্মেল বলেন, “স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, বড় বোন ও বোনের স্বামীর সহায়তায় এতদিন পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছি। প্রতিদিন
৫ থেকে ৭ ঘন্টা পড়ালেখা করতাম। সকলের আন্তরিকতায় আমি স্কুল থেকেও প্রতিটি শ্রেণিতে ভাল ফলাফল করেছি। কিন্তু কলেজে পড়তে হলো অনেক টাকার দরকার। কিভাবে কলেজের পড়ালেখা চালাবো সেটা এখন দুশ্চিন্তা। ছোটবেলা থেকেই প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি, সেই স্বপ্ন পূরন হবে কিনা শংকা এখন। ”
উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “মোজাম্মেল খুবই মেধাবী ছাত্র। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে আমরা তাঁকে বিনা বেতনে পড়িয়েছিলাম। এবার এসএসসিতে এ প্লাস পেয়েছে সে। ঠিকমতো পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারলে মোজাম্মেল ভবিষ্যতে জীবনের সফলতা ছিনিয়ে আনবে। ”
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সভাপতি জসিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, “মেধাবী এই ছাত্র আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছে। ষষ্ট শ্রেণি থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ পাশে ছিল। ভবিষ্যতেও আমরা তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করবো। মোজাম্মেলের মতো মেধাবীদের সহযোগিতায় সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।”