দেশের চাঞ্চল্যকর ঘটনা কক্সবাজারের ইয়াবারাজ্য খ্যাত টেকনাফে গুলি করে হত্যা করা হয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই সময়ে টেকনাফ থানার দায়িত্বে থাকা ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (বরখাস্ত) ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে (বরখাস্ত) কক্সবাজার কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. নেছার আলম।
এর আগে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
প্রদীপ ও লিয়াকতের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. নেছার আলম বলেন, ফাঁসির রায় ঘোষণার পরে কারাগারে আনা হলে তাদের হাজতিদের নির্ধারিত পোশাক পরিয়ে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়েছে। তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে। তবে দু’জনই মানসিকভাবে কিছুটা বিচলিত।
তিনি আরও বলেন, আজ সকালে তারা নাস্তা করেছেন। কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দুপুরের খাবারও প্রস্তুত করা হয়েছে। অন্যান্য বন্দিদের মতো তারাও একই খাবার পাচ্ছেন।
কক্সবাজার কারা কনডেম সেল আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জেল সুপার নেছার আলম বলেন, কক্সবাজার জেলা কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য আলাদা কোনো কনডেম সেল নেই। আমাদের কারাগারে সেল আছে। যেকোনো সেলকে কনডেম সেল ঘোষণা করা য়ায়। সে হিসেবে কনডেম সেল ঘোষণা করে রাখা হয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিদের কীভাবে রাখা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৬ জনকে পৃথক পৃথক সেলে রাখা হয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাদের।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দুইজন হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
মেজর সিনহা হত্যা মামলার যে ১৫ জন আসামি ছিলেন
বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
সেদিন যা ঘটেছিল
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়। আদালত কক্সবাজারের র্যাব-১৫-কে মামলাটির তদন্তভার দেন।