আবদুচ ছালাম
আগষ্ট মানে বাঙালির শোক। শোক থেকে শক্তি আর বাঙালির জাগরণ। ১৯৭৫ এর ১৫আগষ্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের প্রেতাত্মা ও স¤্রাজ্যবাদী শক্তির হীন চক্রান্ত ও মদদে ইতিহাসের বুকে নৃশংসতম, বর্বরতম ও ঘৃণ্যতম অধ্যায়ের সূচনা করে কিছু বিপথগামী, উচ্চাভিলাসী ও স্বার্থলোভী সেনাসদস্য। সেই কালোরাত্রিতে তারা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শরীরকে ব্রাশ ফায়ারে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। মোট ১৮টি গুলি লাগে বঙ্গবন্ধুর গায়ে। বুক জুড়ে যার ছিল সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন, সেই বুক বিদীর্ণ করে সোনার বাংলার স্বপ্নকে ক্ষত বিক্ষত করা হয়। বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার পীটস্থান ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়ীতে প্রবেশ করে প্রথমেই হত্যা করে উদ্দীপ্ত তারুন্যের প্রতিক, বাঙালির আগামীর স্বপ্ন শেখ কামালকে।
শোকে শক্তি, জাগরনের মহাশক্তি শেখ হাসিনাতে অদম্য বাংলাদেশ
0বঙ্গবন্ধু ও শেখ কামালকে হত্যা ক্ষান্ত হয়নি হায়েনার দল, একে একে তাঁরা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ জামাল, এমনকি আট বছরের শিশু শেখ রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করে তার মাথা থেতলে দিয়েছিল। তারা জানত বঙ্গবন্ধুর সন্তানদের মাঝে সঞ্চারিত ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার প্রেরণা। বাংলাদেশকে হত্যা করতে হলে, সোনার বাংলার স্বপ্নের মৃত্যু নিশ্চিত করতে হলে স্বপ্নবৃক্ষের বীজগুলোও ধ্বংস করতে হবে, এই ছিল ঘাতকদের মিশন। তাই তারা বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউইে আর বাঁচিয়ে না রাখার পণ করেছিল। সে রাতে শেখ কামাল ও শেখ জামালের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী শেখ সুলতানা কামাল ও শেখ রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতা শেখ নাসেরকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকের দল। বঙ্গবন্ধুর ভাগিনা শেখ ফজলুল হক মণির চেতনা, মেধা ও কর্মনিষ্ঠায় ভীত ছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। শেখ মণি বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি ও স্বাধিকার আন্দোলনের নক্ষত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের সৃজনশীল যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স তথা মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান কমান্ডার। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখাটা তাদের জন্য নিরাপদ মনে করেনি খুনিরা। তাই তারা সেই রাতে শেখ মণি ও তাঁর অন্তঃস্বর্তা স্ত্রী আরজু মণিকেও নৃংসংশভাবে হত্যা করে। এমনকি তারা কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি হওয়ার কারণে দেশের স্বনামধন্য আইনজীবি, রাজনীতিবিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়ও হামলা চালায় এবং আবদুর রব সেরনিয়াবাতের মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, ভাগ্নে শহিদ সেরনিয়াবাতকে গুলি করে হত্যা করে। এক রাত্রিতে একটি পরিবারকে সবংশে হত্যার মত নির্মম ঘটনা পৃথিবীর বুকে বিরল। মহান আল্লাহত আয়ালা রাব্বুল আল্ আমিনের অশেষ রহমত বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন দেশের বাইরে এবং ঘাতকের দৃষ্টির বাইরে, তাই বেঁচে যান তারা। কিন্তু, পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর জাতীয় চার নেতা ও অগনিত দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের কারাভ্যন্তরে নির্বিচারে হত্যা করে ১৫ আগষ্টের কালরাত্রির পৈশাসিকতার বেনিফিসিয়ারি গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার বেঁচে থাকাটা সৃষ্টিকর্তার এমন রহমত যেন বাঙালির স্বপ্ন বাঁচাতেই। ঘাতকের দলকে নানানভাবে পুরস্কৃত করে হত্যাকান্ডের বেনিফিসিয়ারি গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে দখল করে ঝাঁকিয়ে বসে কয়েক বছরের মধ্যেই স্বাধীনতার চেতনা, মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দেশের সংবিধানের বুকে উপর্যুপরি ছুরি চালিয়ে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। দেশের গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে পদদলিত করে অন্ধকার কুপে নিক্ষিপ্ত করে সদ্য স্বাধীন শিশুরাস্ট্র বাংলাদেশকে কব্জা করে ব্যক্তিগত ভোগ বিলাস, বিত্ত বৈভবের পাহাড় গড়তে মত্ত হয় আততায়ীর মদদগোষ্ঠী। তখন, ৭৫এর আততায়ীর মদদদাতা খুনী জিয়া সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জীবন সংশয়ের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ১৯৮১সালের ১৭মে ফেরারী জীবন ছেড়ে স্বদেশে ফিরেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নেন স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে। খুনী-স্বৈরাচরের রোষানলে থাকা ভঙ্গুগুর, দ্বিধা বিভক্ত দলটিকে গোছাতে দেশের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বাঙালি জাতির শোককে শক্তিতে পরিনত করেন। এবং এই শক্তি থেকেই হয় জাগরণ, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন লৌহ মানবী, গনতন্ত্রের মানসকন্যা ও মহান জননেত্রী। জননেত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে পতন ঘটে স্বৈরাচারের, আসে গতনন্ত্র। ৭১এর হানাদার বাহিনীর দালাল ও ৭৫এর ঘাতকগোষ্ঠী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে আবারো নীল নকশা সাজায়। নীল নকশার নির্বাচনে ২০০১সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা রক্ত জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। তার ধারাবাহিকতায় ২০০৪সালের ২১আগষ্টে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যরত শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড চার্জ ও গুলি বর্ষন করে ঘাতক সরকারের মদদপুষ্ট খুনী চক্র। ৭৫এ অশেষ রহমত দিয়ে আল্লাহত আয়ালা যাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এবার তিনি রক্ষা করলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ হারায় নারীনেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪জন নিহত হন এবং তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন এ যঘন্যতম বর্বর গ্রেনেড ও গুলিবর্ষনের ঘটনায়। শত ষড়যন্ত্র ও বাঁধা পেরিয়ে
জয় বাংলা
লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও
Share.