এক মসজিদে এতোকিছু, এক জামাতেই নামাজ পড়বেন নারী-পুরুষ

0

নামাজের ব্যবস্থা, পাঠাগার, গবেষণা ও দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম, হেফজখানা, শিশুশিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজ্জযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ— এমন আরও অনেক কার্যক্রম চলবে একেকটি মসজিদ ঘিরে। 

প্রতিবন্ধীদের জন্যও থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগকালে ধর্মীয় এ উপাসনালয় ব্যবহার হবে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও। ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রাখা হয়েছে অফিসের ব্যবস্থা।

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার।

নামাজ আদায়ের পাশাপাশি ইসলামি গবেষণা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মসজিদের ব্যবহার মুসলিমদের পুরোনো ঐতিহ্য। যদিও আগের সে ঐতিহ্য আর নেই, মসজিদ মানেই এখন শুধু নামাজের স্থান। কোথাও কোথাও শিশুদের কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে সর্বোচ্চ।

হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবার দেশের প্রতি জেলা ও উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে ৫০টির দ্বার খুলেছে আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুন)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সেগুলো উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ছিল ১০টি— ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর ও নবীনগর, চাঁদপুরের কচুয়া, চট্টগ্রামের জেলা সদর, লোহাগাড়ার মিরসরাই ও সন্দীপ, কুমিল্লার দাউদকান্দি, খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও নোয়াখালীর সুবর্ণচর।

চট্টগ্রাম জেলায় অবশ্য মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে চারটির— চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আবাসিক প্রকল্প বাকলিয়ার কল্পলোকে, লোহাগাড়া, সন্দ্বীপ ও মিরসরাই উপজেলায়। এর মধ্যে প্রথম পর্বে নির্মিত মিরসরাইয়ের মডেল মসজিদটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মিরসরাই উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বি-ক্যাটাগরি হিসেবে ৪০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হয়েছে। তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটির প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। ভবনের মোট আয়তন ২৯ হাজার ৬০০ বর্গফুট। এখানে একসঙ্গে ৯০০ মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। বাস্তবায়নে ব্যয় ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

এর বাইরে চট্টগ্রাম নগরের কল্পলোক আবাসিক এলাকায় সিডিএর দশমিক ৭২৬০ একর জায়গায় নির্মিত হয়েছে মডেল মসজিদ। চারতলা বিশিষ্ট এই মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে লোহাগাড়ায় দশমিক ৪৫৮৮ একর জায়গায়, একই বরাদ্দে সন্দ্বীপে মসজিদের জন্য দান করা জায়গায় তিনতলা মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এছাড়া সাতকানিয়া শাহী জামে মসজিদ ও পটিয়া হাজি আনোয়ার আলী জামে মসজিদ (ওয়াকফ) জায়গায় মসজিদ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ দিকে।

তবে চন্দনাইশ, বাঁশখালী, কর্ণফুলী, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ এখনও শুরুই হয়নি। ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে মসজিদের জন্য বিকল্প প্রস্তাবনা ঝুলে রয়েছে এখনো।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

সরকার গঠনের পর ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা দেন। পরে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কেটি টাকা।

অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী মডেল মসজিদের জন্য ৪০ শতাংশ জায়গার প্রয়োজন। জেলা পর্যায় ও উপকূলীয় এলাকায় চারতলা এবং উপজেলার জন্য তিন তলা মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের কোনো দেশেই একসঙ্গে এতগুলো নান্দনিক ও ব্যয়বহুল মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। বাংলাদেশ সরকারই প্রথম এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছে। সরকারি অর্থায়নে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। নির্মাণকাজের সঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তরও যুক্ত রয়েছে।

সবগুলো অর্থাৎ ৫৬০টি মসজিদ তৈরি হলে একসঙ্গে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৪০ পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৪০০ নারী নামাজ আদায় করতে পারবেন। সব মসজিদের পাঠাগারে বসে বই পড়তে পারবেন ৩৪ হাজার পাঠক। গবেষণার সুযোগ পাবেন ৬ হাজার ৮০০ জন।

দৈনিক ৫৬ হাজার মুসল্লি দাওয়াতি কার্যক্রম, প্রতিবছর ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর হেফজ পড়া, ১৬ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, ২ হাজার ২৪০ অতিথির আবাসনের সুবিধা থাকবে। এছাড়া হজে গমনেচ্ছুদের রেজিস্ট্রেশনসহ প্রতিটি মসজিদে থাকবে মৃতদেহ গোসল করানোর ব্যবস্থাও।

ইফার মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রের সুবিধা নিয়ে। অর্থাৎ দুর্যোগের সময় বিপথগামী মানুষ এসব মসজিদে আশ্রয় নিতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী-পুরুষের জন্য পৃথক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ হুইলচেয়ার নিয়ে এলে র‌্যাম্প দিয়ে উঠে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় নামাজ পড়তে পারবেন। তাদের অজুর জন্যও রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।’

Share.

Leave A Reply