শর্ত শিথিল হলেও ঋণে আগ্রহ নেই প্রবাসীদের। এ কারণে গত চার মাসে চট্টগ্রামে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে মাত্র ৯ জন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মীদের আত্মকর্মস্থানের জন্য ঋণ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
ঋণ নিয়ে বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি, গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ, দুগ্ধ খামারসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারবে। এজন্য জামানত ছাড়া দুই লাখ টাকা এবং জামানত দিয়ে সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ঋণ সহায়তা নিতে পারবে। ঋণ সহায়তা দিতে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সারাদেশের জন্য ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের প্রত্যায়নপত্রের ভিত্তিতে ১৫ জুলাই থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে এ ঋণ দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে প্রণীত নীতিমালায় দুইটি শর্তের কারণে বিগত সাড়ে তিন মাসে চট্টগ্রাম থেকে একজন প্রবাসীও ঋণ নিতে পারেনি। শর্ত দুইটি হচ্ছে চলতি বছরের পহেলা মার্চ থেকে দেশে আসা অভিবাসী কর্মী হতে হবে এবং যারা ঋণ নিবে তারা এটি শোধ না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় বিদেশ যেতে পারবে না, এমন অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হবে। ফলে এ দুইটি শর্তের কারণে মার্চের আগে দেশে আসা প্রবাসীরা এ ঋণ সহায়তার আবেদন করতে পারেনি। একই সাথে যাদের পুনরায় বিদেশ যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তারাও ঋণ সহায়তা নিতে পারছেন না। এ অবস্থায় ঋণ প্রদানের নীতিমালায় কিছু কিছু শর্ত শিথিল করে সরকার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যৌথ সভা করে শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে গত ১৫ দিনে চট্টগ্রাম থেকে ৯ জন ঋণ গ্রহণ করে। কিন্তু শিথিলের পরও ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত দেশে অবস্থান করার শর্তের কারণে আটকেপড়া প্রবাসীদের অনেকেই ঋণ নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা রয়েছে ৪টি। মহানগরীর একটি ছাড়াও অপর তিন শাখা হচ্ছে হাটহাজারী, সন্দ্বীপ ও রাউজান উপজেলায়।
জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মহানগর শাখার ম্যানেজার সুমন কান্তি দেব দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘১৫ জুলাই থেকে অভিবাসীদের ঋণ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হলেও গত চার মাসে চট্টগ্রাম থেকে ৯ জনকে দুই লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঋণ বাছাই কমিটিতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক মহানগর শাখার ৭টি, রাউজান শাখার ৪টি, হাটহাজারী ও সন্দ্বীপ শাখার ২টি করে আবেদন রয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী কয়েক দিনের ঋণগুলো বিতরণ করা হবে।’
সুমন কান্তি দেব বলেন, ‘ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দুইটি শর্তকে নিজেদের জন্য বড় সমস্যা উল্লেখ করে অভিবাসীরা ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যৌথ সভা করে ঋণ প্রদানে কিছু শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শিথিলের পরও আগের একটি শর্ত এখনো বলবৎ থাকায় আটকেপড়া প্রবাসীদের অনেকেই ঋণ নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। শর্তটি হচ্ছে যতদিন পর্যন্ত ঋণ শোধ হবে না, ততদিন গ্রহিতাকে দেশে অবস্থান করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, ‘চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগে পহেলা মার্চ থেকে দেশে আসা প্রবাসীরা ঋণের জন্য আবেদনের অন্যতম শর্ত ছিল। কিন্তু শর্ত শিথিল করে পহেলা জানুয়ারি থেকে যারা দেশে এসেছেন, তাদেরও ঋণের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। আশা করি এবার ঋণ গ্রহিতার সংখ্যা বাড়বে।’