কেমন হতে পারে কোভিড পরবর্তী পৃথিবীর ব্যাংকিং আর লেনদেন

0

মহামারি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক নতুন প্রযুক্তি আর কৌশল এসেছে। লেনদেন সংক্রান্ত অনেক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। আর এটাই এই ক্ষেত্রটিকে আরও শক্তিশালী, সময়োপোযোগী করে গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষের লেনদেন আর টাকা-পয়াসা সংক্রান্ত কর্মকান্ড নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে মাস্টারকার্ড। তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মোবাইলে ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। এবং ৬১ শতাংশেরও বেশি মানুষ ‘স্পর্শহীন লেনদেন’ করতে বেশি আগ্রহী। এটি শুধুমাত্র নিরাপদ কেনাকাটাই নয় বরং নিজের টাকা-পয়সা কোথায় কেমন করে খরচ হচ্ছে তার একটা ভার্চুয়াল হিসেব রাখার ব্যাপারটাও নিশ্চিত করেছে।

কোভিডে অনেক মানুষ অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছেন, এখন যাচ্ছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে ডিজিটাল ব্যাংকিং এর দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকেই। আর এটাই ভবিষ্যতের ব্যাংকিং আর লেনদেনের ধরণ হতে চলেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি এই সমস্ত বিষয় নিয়ে বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতিদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে মাস্টারকার্ড।

ইংল্যান্ডের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনোভেটিভ ফাইন্যান্স আর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শার্লট ক্রসওয়েল বলেন, ‘লকডাউনের কয়েকমাসের মধ্যে ইংল্যান্ডের ৬ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক প্রথমবারের মতো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, যা মোট জনসংখ্যর প্রায় ১২ শতাংশ। এটা অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার।’

আর প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন বলেছেন যে মহামারি পরিস্থিতি শেষ হলেও তারা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করবেন। দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ অন্যান্য ডিজিটাল লেনদেনে যুক্ত থাকতে চান বলে জানান।

মাস্টারকার্ডের সমীক্ষা অনুযায়ী, কয়েকমাসে তাদের ‘কন্টাক্টলেস ট্র্যানস্যাকশন’ বা স্পর্শহীন লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

ইএমইএ কমার্স গুগল এর সঙ্গে কাজ করছে। সংস্থাটির এর প্রধান ফ্লোরেন্স ডিস জানান, ‘মহামারির মধ্যে সরাসরি বাজার বা দোকানে গিয়ে কেনাকাটার পরিমাণ অনেক কমে গেছে, এর বদলে অনলাইন দোকান থেকে কেনাকাটা করতে আগ্রহী হয়েছেন মানুষ। এমনকি আগে কখনো অনলাইনে কেনাকাটা করেননি এমন মানুষও এই সময়ে অনলাইনে কিছু না কিছু কিনতে আগ্রহী হয়েছেন।’

লকডাউন যখন কিছুটা শিথিল হল তখন বিভিন্ন পাব ও রেস্টুরেন্টকে দেখা গেছে অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা নিয়ে এসেছে তারা। এতে করে টিকিট বা টাকা সরাসরি হাতের স্পর্শ করতে হয়নি। ভবিষ্যতেও হয়তো ডিজিটাল টিকিট এর সুবিধা আসবে বলে মনে করেন ফ্লোরেন্স।

তবে ভবিষ্যতে সবক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য দরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার। ক্রেতাদের জন্য তো বটেই, ব্যবসায়ীরাও এতে করে আরও নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারবেন। মাস্টারকার্ডের নিউ পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম বিভাগের প্রধান পল স্টডার্ট বলেন, ‘এই সময়ে অনেক ক্রেতাই ভুয়া ও ফ্রড ইমেইল কিংবা মেসেজ পেয়েছেন। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন এই অভিযোগ করেছেন যে মহামারিতে এধরনের ইমেইল ও মেসেজের পরিমাণ বেড়েছে। ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও তাদের তথ্য গোপন রাখতে বধ্যপরিকর মাস্টারকার্ড। তবে আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করি তবে এই সংক্রান্ত ঝুঁকি ও বিপদগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব, ভবিষ্যতের লেনদেন ব্যবস্থাকে নিরাপদ রাখতে এখন থেকেই কাজ করতে হবে।’

মহামারি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক নতুন প্রযুক্তি আর কৌশল এসেছে। লেনদেন সংক্রান্ত অনেক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। আর এটাই এই ক্ষেত্রটিকে আরও শক্তিশালী, সময়োপোযোগী করে গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা।

পল বলেন, ‘আমরা চাইলে এই ক্ষেত্রটিকে আগের পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে পারি, আর নয়তো ভবিষ্যতের জন্য নতুন করে আরও শক্তিশালী ডিজিটাল অর্থনীতির অংশরূপে গড়ে তুলতে পারি।’

Share.

Leave A Reply