প্রচারণা-শাস্তির মধ্যেও মাস্কে অনীহা মানুষের!

0
, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট |
একদিকে চলছে মাস্ক ব্যবহার করতে প্রচারণা, অন্যদিকে মাস্ক না পরলে করা হচ্ছে জরিমানা। শিশু থেকে বৃদ্ধ- সবাইকে মাস্ক পরাতে এতো উদ্যোগের পরেও মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে আসছে মানুষ।

সামাজিক অনুষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্র, বিপণি বিতান, অফিস, আদালত কিংবা আড্ডায় অংশ নেওয়া অনেকের মুখেই থাকছে না মাস্ক। যারা মাস্ক রাখছেন তাদের অনেকে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করছেন না।শীতের মধ্যেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর এই সময়ে মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে আসায় বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। থেমে যাওয়া মৃত্যুর মিছিলও শুরু হয়েছে আবার।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০ দিনে চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮২৬ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫ জন। প্রতিদিন গড়ে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন ২০০ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে টিকা অবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থামাতে মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবেই ব্যবহার করতে হবে।

মাস্ক না পরলে জরিমানা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে আরও বেশি প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিয়ে তারা বলছেন, সচেতনতা সৃষ্টি না হলে শুধু জরিমানা করে, শাস্তি দিয়ে সবাইকে মাস্ক পরানো সম্ভব নয়।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নভেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়া অভিযানে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৯০৫টি মামলায় ৪ লাখ ১১ হাজার ২৬০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

প্রতিদিন সকাল ও বিকেল- দুই শিফটে একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরের বিভিন্ন স্পটে চলা এসব অভিযানে মাস্ক না পরায় জরিমানার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রায় ৪০ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও নগরের বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিন মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এরপরেও মাস্ক ছাড়াই বাইরে আসছে মানুষ।

মাস্কই করোনার প্রতিষেধক:

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, করোনার টিকা এখনও আবিষ্কার হয়নি। টিকা আবিষ্কার হয়ে বাংলাদেশে না আসা পর্যন্ত মাস্কই করোনার প্রতিষেধক। বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা নিয়ে অবহেলা করার সুযোগ নেই। করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থামাতে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরতেই হবে। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে আসা যাবে না।

অনেকের নিয়মিত মাস্ক কেনার সামর্থ্য নেই- এটা সত্যি। তাদের বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এ সমস্যা থাকবে না। সবার মধ্যে যাতে মাস্ক নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয় সেই ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।

জরিমানা নয়, করোনার ভয়ে মাস্ক ব্যবহার করুন:

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম বাংলানিউজকে জানান, মাস্ক পরানোর জন্য চলমান অভিযানে অনেককেই দেখা গেছে- ম্যাজিস্ট্রেট দেখলেই তারা মাস্ক মুখে পরছেন। অন্যসময় মাস্ক পকেটে ঢুকিয়ে রাখছেন।

তিনি বলেন, শুধু জরিমানা কিংবা শাস্তির ভয়ে মাস্ক পরলে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হবে। জরিমানা নয়, করোনার ভয়ে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তবে কেউ মাস্ক না পরলে তাকে শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাস্ক ব্যবহার না করলে অভিযানে সামর্থ্যবানদের জরিমানা করছি। পাশাপাশি যাদের সামর্থ্য নেই তাদের মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। মাস্ক ব্যবহার করতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছি আমরা।

Share.

Leave A Reply