রেল সংযোগে সারাদেশ কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে: প্রধানমন্ত্রী

0

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যোগাযোগের মাধ্যমে সমগ্র দেশকে কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি রেল পরিষেবা, গতি ও পরিবহনকে বিশ্বমানের করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা সমগ্র বাংলাদেশ থেকে কক্সবাজার (রেল সংযোগের মাধ্যমে) যাত্রা সহজ করতে ব্যবস্থা নেব।

শনিবার (১১ নভেম্বর) অপরাহ্নে নবনির্মিত রেল স্টেশনের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে আইকনিক কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের সাথে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশবাসী এখন কক্সবাজার থেকে পঞ্চগড়, রাজশাহী, দেশের দক্ষিণাঞ্চল, সুন্দরবন পর্যন্ত রেলপথ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। কেন গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়াকে ছেড়ে দেওয়া হবে (রেল সংযোগ থেকে) তার মানে সারা বাংলাদেশ কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে। কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করায় দেশের মানুষ এখন গর্ববোধ করছে। আজকে কক্সবাজার রেল যোগাযোগের সাথে যুক্ত হয়েছে। এই দিনটি গর্বিত হওয়ার দিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি রেলপথ উদ্বোধন করে আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। এটা এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আজ সেই দাবি পূরণ হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তায়নের সময় ৩৯টি মেজর ব্রীজ করতে হয়েছে, ২৪৪টি ছোটও মাঝারি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে, ৯টি স্টেশন ও আধুনিক কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিগনালিং ব্যবস্থা ইনস্টল করা হয়েছে। একটি ওভারপাস ও দু’টি আন্ডারপাস ও নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রেললাইনটি চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে যাতে সংযুক্ত হয় তার ব্যবস্থাও আমরা করে দেব। যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো উন্নত হয়।
তিনি বলেন, সরকার ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মিলে সম্প্রতি খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল চলাচলের উদ্বোধন করেছে। যে লাইনটা এক সময় খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। পাশাপাশি ঢাকা- টঙ্গি-গাজীপুর ডুয়েল গেজ লাইনও নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলের যাত্রীসেবা ও পণ্য পরিবহনের মানোন্নয়নে আরও ৪৬টি নতুন ব্রডগেজ লোকামোটিভ, ৪৬০টি নতুন যাত্রীবাহী ক্যারেজ, ২০০টি নতুন মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ, ১৩১০টি নতুন ওয়াগন সরবারহের উদ্যোগও ব বর্তমান সরকার হাতে নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাতে উন্নীত হয় সেই পদক্ষেপই আমরা নিয়েছি এবং সেটা আমরা বাস্তবায়ন করবো। বিগত ১৫ বছরের বাংলাদেশকে বর্তমান সরকার অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বিএনপি আমলে যেখানে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল সেখানে সরকার এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে। এমনকি দু’হাতে রিজার্ভের অর্থ ব্যয় করে করোনাকালীন জনগণকে বিনাপয়সায় ভ্যাকসিন দেওয়ার পাশাপাশি সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রেখেছে। যা অনেক উন্নত দেশও পারেনি। ফলে সেখানে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে।
এ সময় বিশ্ব মন্দার প্রভাবে দেশে যেন কখনো খাদ্যাভাব না হয় সেজন্য দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
এত উন্নয়নের পরও যারা উন্নয়ন দেখে না সেসব চোখ থাকতে অন্ধদের আধুনিক জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউটে ১০ টাকার টিকিট কিনে চোখের চিকিৎসা করাবার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আসলে এটা তাদের চোখের দোষ নয়, মনের দোষ। আজকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, বাসে, রেলে আগুন দেওয়া হচ্ছে। আমরা রেলের জন্য যেসব নতুন লোকামোটিভ এনেছিলাম সেগুলোও আগুন দিয়ে তারা পুড়িয়েছে। যারা এত বীভৎস কাজ করতে পারে এই দুর্বৃত্তপরায়ণতায় যারা জড়িত তাদের চোখ নয় আসলে মনই অন্ধকার। কাজেই এদের ব্যাপারে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এরা ধ্বংস জানে সৃষ্টি করতে পারে না। আমরা সৃষ্টি করি, আর তারা ধ্বংস করে। কিন্তু এই ধ্বংস যেন আর করতে না পারে। মানুষকে পুড়িয়ে মারবে এটা সহ্য করা যায় না।
তিনি এই আধুনিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কার্যকরী এবং গতিশীল রাখতে ট্রেনের ক্যারেজ, প্লাটফর্ম, ষ্টেশনসহ আশাপাশে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন বজায় রাখার এবং এগুলো ব্যবহারে যত্নবান হওয়ারও আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। এসময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যক্রম এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী রেলস্টেশনে পৌঁছালে স্থানীয় শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়।
Share.

Leave A Reply